শ্মশান কালীর মন্দির

শ্মশান কালীর মন্দির - Green Vivacity


        ছোট বেলা থেকেই আমার কাছে ভগবান মানে নিজের বাবা-মা আর ভুত মানে অতীত। যার কোন অস্তিত্ব বর্তমানে নেই। পূজা মানে আমার কাছে কিছু ফল-মুল খাওয়া, আর হই হুল্লোড় করা। আর ভুতের গল্প আমার কাছে হাস্য কৌতুকের বেশী কিছু নয়।

সেই আমি একবার ভুতের হাতে মরতে মরতে কিভাবে বেঁচেছি তার গল্পই আজ শোনাব।

আমি তখন গ্রাজুয়েশনের ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষা দিয়ে হস্টেলের পাঠ চুকিয়ে, বাড়িতে এসে, সারাদিন টোটো করে ঘুরে বেড়াচ্ছি। তখনকার দিনে তখন ও রাস্তায় টোটো গাড়ি নামেনি, নইলে নির্ঘাত বিনা বাক্যে টোটো কোম্পানির সেলস ম্যানেজার হয়ে যেতে পারতাম।
সব সময় সম বয়সী বন্ধুদের সঙ্গে তাস, নইলে ফুটবল। দিনে চার বার মা খুঁজে খুঁজে খেতে ডেকে নিয়ে যায়। বাবার সঙ্গে তো বলতে গেলে দেখাই হয় না। আবার যখন তখন কাউকে না বলে চলে যেতাম বন্ধুদের নিয়ে নিজের মামা-মাসীর বাড়ি। কিংবা অন্য কোন বন্ধুর আত্মীয় বাড়ি।

তখনকার দিনে গ্রাম বাংলার মানুষজন আক্ষরিক অর্থেই "অতিথি দেব ভব" মেনে চলতেন। বাড়িতে শুধু নিজেদের আত্মীয়দের সেবা করা হত না, গ্রামের অন্য কারো বাড়ির আত্মীয় পরিজনের ও সাদরে আপ্যায়ন করা হত। তাই যেখানেই যাই বেশ ভালো মতই পেট পূজার আয়োজন হয়ে যায়।

এমন-ই এক দিনে, এক পাড়ার বন্ধু বলল চল আমার দিদির বাড়ি যাই। ওখানে আজ রাতে যাত্রা আছে। ঐ দিদি নিজের দিদি নয়, কিন্তু গোটা পাড়ার ছেলেদের ডেকে ডেকে খাওয়ায়।

আর কি। চললাম পাঁচ বন্ধু মিলে।
দিদির বাড়ি তের নম্বর যেতে গেলে পাঁচ-নম্বর বাস স্টপ থেকে ভ্যান-রিক্সায় যেতে হয় আর আর ভ্যান-রিক্সা না পেলে ৫-৬ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয়। (সাগর-দ্বীপ যাওয়ার পথে পড়ে পাঁচ-নম্বর, আট-নম্বর)
আমার ভাগ্যদেবী বরাবরই একটু বিমুখ থাকেন। কারণ আমি ওনাকে ঠিক মত তোয়াজ বা তোয়াক্কা করি না। আজ ও তার ব্যতিক্রম নয়। পাঁচ-নম্বর বাস স্টপে নেমে একটা ও ভ্যানের টিকির নাগাল পেলাম না। অগত্যা এগার নম্বর বাস - অর্থাৎ পায়ে হাঁটাই গতি। হেঁটে হেঁটে যখন দিদির বাড়ি পৌঁছলাম তখন প্রায় দুপুর দেড়টা বাজে। গিয়ে দেখি দিদির বাড়িতে যথারীতি যজ্ঞ লেগে গেছে। একে দিদিদের একান্নবর্তী পরিবার, প্রায় তিরিশ জনের মতো সদস্য। তার উপর ঐ প্রত্যন্ত গ্রামে যাত্রা- মানেই এক গ্রাম্য মেলা। তাই যত আত্মীয় আছে সবাই চলে এসেছে। শুধু দিদির বাড়িতে নয়, সেখানের সব বাড়িতেই একি অবস্থা।

এতটা হেঁটে এসে, খিদেয় পেটের মধ্যে শুধু ছুঁচো নয়, ইঁদুর উকুন ছারপোকা যে যেখানে ছিল সবাই মিলে চ্যাঁ চুঁ করে ডাকছে। কোন রকমে পুকুরে কাক-স্নান মেরে এলাম। লম্বা করে লাইন দিয়ে তালপাতার আসন আর কলাপাতার থালা পেতে দেওয়া হয়েছে। প্রথমেই শুধু মুগের ডাল আর আলু-ভাজা দিয়ে পাতের গন্ধমাদন পর্বত উদরস্থ করে নিলাম। তারপর এলো গরম গরম দেশী মুরগির ঝোল। এটা আছে জানা ছিল না। এ তো যথারীতি আমাদের সঙ্গে চিটিং। আর পেটে একতিল ও জায়গা নেই। কিন্তু মুরগির ঝোল ছেড়ে উঠলে যদি মুরগি-দেবতা রাগ করেন। আবার শুধু শুধু মুরগি মাংস নেওয়া যায়না। লোকে খারাপ বলবে। দুটো ভাত নিতেই হল। চেপে চুপে মাংস গুলো তো সেঁটে নিলাম, ভাত কোথায় ঠুসি!

উঠতে যাচ্ছি, দিদির ভাশুর বলছেন "এতো বড় একটা ছেলে খেয়েছে দ্যাখ! ভাত পরিষ্কার করে খেতে জানেনা। দ্যাখ আমাদের টুবলু, বাবলু কেমন পাত পরিষ্কার করে খেয়েছে। লোকে দেখলে কি বলবে ?"
টুবলু হল দিদির ছেলে, আর বাবলু দিদির দেওরের ছেলে, মানে আমাদের ভাগ্নে।

আমার জিভ টা বড়ো বেপরোয়া, স্থান কাল পাত্র দেখেনা, যখন তখন পিছলে যায়। মুখ থেকে বেরিয়ে গেল "লোকে বলবে জমিদারের ছেলে খেয়েছে। আর ওদের দেখলে বলবে ভিখারির ছেলে খেয়েছে, চেটে-পুটে খেয়েছে"

বলতে সবাই হোহো করে হেসে উঠলো।
কিন্তু দিদি আমায় একটু চোখ দেখিয়ে দিল। দিদির ভাশুরের বয়স পঞ্চাশ-এর কাছাকাছি। আক্ষরিক অর্থে আমার বাবার বয়সী। তাঁকে বাড়ির সবাই মান্য করে। এমন কি দিদি-জামাইবাবু ও ওনার মুখের ওপর কথা বলে না। আর আমি মুখের উপর ঘুরিয়ে বলে দিলাম ভিখারি!

তখন তো জামাই বাবু শ্যালকের ঠাট্টা বলে হেঁসে উড়িয়ে দিলেন । কিন্তু সেই ব্যাঙ্গের শোধ পরে কিভাবে তোলা হয়েছে সেই ঘটনায় আসি।

সারাদিন খেলা, হাসি ঠাট্টা করে কেটেছে। যথারীতি বাচ্চা গুলোর খুব প্রিয় হয়ে উঠেছি। সন্ধ্যায় হ্যাচাক লাইট জ্বেলে সবাই এক জায়গায় জড় হয়েছি। কথায় কথায় কেউ একজন গল্পের প্রসঙ্গ তুলতেই, বাচ্চা গুলো ধরল ভুতের গল্প হোক। আমি বললাম ভুত বলে কিছু হয় না বাবু। আমি তোমাদের হাসির গল্প শোনাব। দিদির ভাশুর মনে হয় আমার লেজে পা দেবেন বলে তৈরি হয়ে আড়ালে কান পেতে ছিলেন। কথা থেকে উদয় হয়ে বললেন "কে বলে ভুত হয় না। তোমরা আধা শহুরে ছেলেপুলেরা এমন ভাব কর যেন অন্য গ্রহ থেকে এসেছ"

এর পর শুরু হল তর্ক যুদ্ধ। লোকে বলে আমার সঙ্গে এঁড়ে তক্কে কেউ পারেনা। আর ইনি তো একেবারেই গ্রামের সাদাসিধে সরল মানুষ। আর আমি এখন খোলা ষাঁড়। আমার সঙ্গে তর্কে পারবেন কেন!
আমেরিকা, জাপান, গ্রহ নক্ষত্র ইত্যাদি ইত্যাদি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শেষে এলেন শ্মশান কালীর মন্দিরে।
বললেন "ঠিক আছে। তোমার যখন এতই সাহস, কালকে শনিবার আছে। কাল রাতে শ্মশান কালীর মন্দির থেকে ঘুরে এসে দেখাও "

আমার জামাইবাবু বলল "ছেড়ে দাও দাদা, এই খ্যাপা কে আর খেপিও না"
আমি বললাম "কাল তো আমায় বাড়ি যেতে হবে জামাই বাবু। "
বড়ো জামাইবাবু বললেন "দেখলি তো, তোর শালার খালি মুখে বড় বড় কথা। কেমন ভয়ে লেজ গুটিয়ে পালাবে বলছে"
বাস এর পর আমায় আর কিছু বলার দরকার নেই। বুকের ছাতিতে মাংস থাক না থাক, সাহস নিয়ে কথা হবেনা।
বললাম "ঠিক আছে। কি করতে হবে বলুন। কি করে বুঝবেন আমি শ্মশান কালির মন্দিরে গিয়ে ছিলাম?"
বড়ো জামাইবাবু বললেন "আশ পাশের গ্রামের মধ্যে শুধু ওখানেই নাটা ফলের গাছ আছে, ওই গাছের পাতা আনতে হবে।"
আমি বললাম "আমি তো নাটা ফলের গাছের নাম-ই জীবনে শুনিনি। গাছ চিনব কি করে?"
"কাল তোমাকে দিনের বেলা নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দেওয়া হবে"
তাই হল। সকাল বেলা আমায় নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হল। গ্রাম থেকে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার দুরে এক শুনশান শ্মশান। শ্মশানে কিছু পোড়া কাঠ, কয়েকটা ভাঙা হাঁড়ি, একটা ভাঙা কোদালের ড্যাঁপ আর বহু পুরানো ছেঁড়া মাদুর আর কাঁথার টুকরো পড়ে আছে। তার পাশে ছোট একটা মাটির মন্দির। টালির চাল। মন্দির না বলে আটচালা বলা ভালো। পাশে একটা ছোট মাটির পুরানো কালী মূর্তি ও সামনে ঘট। মূর্তি আর ঘটের উপর ধুলো জমে। আর মন্দিরের সামনে ছোট ঝুপসি মতো একটা গাছ, প্রায় ফুট পাঁচেক লম্বা। ওটাই নাটা ফলের গাছ। লোকে শবদাহ করতে এসে ঐ মন্দিরের চাতালে বিশ্রাম নেয়। জায়গা টা ভালো করে দেখে নিলাম, সাপ খোপ থাকতে পারে কিনা।
দেখে আমরা ফিরে এলাম। ফিরে আসার পর আমার পকেট ভালো করে চেক করে নিলেন পাতা তুলে এনেছি কিনা। আমি বললাম "চিন্তা করবেন না, একদম তাজা পাতা এনে দেখাব, খেতে চাইলে খেতে ও পারবেন।"
তারপর সারাদিন ছেলেদের, দিদিদের মুখে ঐ শ্মশান কালী মন্দিরের অনেক ভয়ানক সব কাহিনী শুনলাম।
রাতে কেউ নাকি আশে পাশে যায়না। অনেকে নাকি অনেক কিছু অলীক ঘটনা দেখেছে -ঐ নাটা গাছ রাতে তাল গাছের মতো বড়ো হয়ে যায়। গাছে কাউকে সাদা কাপড়ে ঝুলতে দেখা যায়। রাস্তায় যে যায় পেছন থেকে নাম ধরে ডাকে। পেছন ফিরে তাকালেই ঘাড় মটকাবে। একবার এক অচেনা লোকের ঘাড় ভাঙা দেহ পাওয়া গেছে। আবার একবার নাকি কতক-গুলো লোক আসছিল, তারা ব্রহ্মদৈত্য দেখেছে। ওই নাটা গাছের থেকে লম্বা। কেউ কেউ আবার মাঠের মাঝে আলো জ্বলতে দেখেছে। একবার এক শহুরে ছেলে এরকম চ্যালেঞ্জ করে গিয়েছিল। তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই রাতে ঐ রাস্তায় কেউ হাঁটে না।
সব শুনলাম, বুঝলাম ও। সব গুজব ছাড়া কিছু নয়। দিদি অনেকবার বলল "যাস না রে কোচি, জায়গা টা ভালো নয়"। দিদির কাছে আমরা সবাই কোচি, কোচি মানে ছোট ।

রাত ১০ টা নাগাত আমার যাওয়ার কথা আছে। নতুন ব্যাটারি লাগানো একটা টর্চ আর একটা লাঠি নিলাম। দিদির কাছ থেকে একটা ছুরি ও পকেটে নিয়ে নিয়েছি। কখন কি কাজে লাগে!
গ্রামের রাস্তায় রাত দশটার পর সাধারণত কেউ থাকে না। তার উপর কাল সারারাত যাত্রা দেখার ঘুম। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। দু একটা ঘরে টিম টিম করে টিমটিমির আলো জ্বলছে। একটা ঘুপচি মতো কুঁডে ঘর থেকে এক বৃদ্ধের ঘড়র ঘড়র হাঁপানির কাশি, আর এক বাড়ির এক শিশুর কান্না ছাড়া সারা গ্রামে আর কোন শব্দ পাইনি। কিছুক্ষণ চলার পর গ্রাম শেষ হল। রাস্তা আরও ফাঁকা।

রাত একেবারে অমাবস্যার মতো নিকষ কালো নয়। চাঁদ নেই, কিন্তু আকাশ পরিষ্কার, আকাশে হাল্কা আলোর আভাস আছে। গাছ পালা বোঝা যাচ্ছে। একটু দুরের গাছ গুলোকে দেখে মানুষের ছায়া মনে হতে পারে। গাছে গাছে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর আমার পায়ের শব্দ ছাড়া কোন শব্দই নেই। মাঝে মাঝে নিজের পায়ের শব্দেই মনে হচ্ছে কেউ যেন পিছু নিয়েছে।
আচমকা গাছের গায়ে টিক টিক টিক টিক করে একটা একটা টিকটিকি ডেকে উঠতেই আমার বুক ঢিপ ঢিপ ঢিপ ঢিপ করে উঠলো। আবার টিকটিকি বুঝে হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক হল। হেঁটে চলেছি এমন সময় রাস্তা দিয়ে ছোট মতো কিছু একটা ক্রস করে গেল। তখন বুক টা আবার ধর ফড় শুরু করেছে। কিছু না থাক, গ্রামের রাস্তায় সাপ-শিয়াল তো বেরতেই পারে। অন্ধকার রাতে কতটা এগোলাম ঠিক বুঝতে পারছিনা। সব সময় মনে হচ্ছে, পেছনে কেউ একজন চপ্পল পরে আসছে। কয়েকবার পেছন ফিরে দেখতে চেষ্টা করলাম। কোথাও কিছু নেই। এমন সময় সামনে দেখলাম রাস্তার ধারে সাদা শাড়ী পরা কেউ দাঁড়িয়ে। ভাবলাম হয়তো গ্রামের কোন মহিলা পায়খানা করেতে এসেছে। একটু দাঁড়িয়ে গেলাম। দেখি মহিলা নড়ে না। একটু গলা খকর দিলাম। তাও হিল দোল নেই। তখন টর্চ মেরে দেখি একটা সাদা কাপড় একটা খেজুর গাছের উপর জোড়ান। শুধু শুধু সময় নষ্ট। আবার এগিয়ে চললাম। আর একটু দুরেই মন্দির। আবছা আবছা আলোয় মন্দিরের অবয়ব দেখা যাচ্ছে।

কয়েক পা এগোলাম। এমন সময় একটু দুরে ইহিঁহিঁহিঁহিঁ করে কেউ যেন হেসে উঠলো। আচানক ওই ডাকে আমি চমকে উঠে ডাঁড়িয়ে পড়লাম। কোথাও কিছু নেই। হয়তো মনের ভুল। আবার এগোলাম। কিছুদূরে সামনের রাস্তা থেকে কেউ যেন ছুটে রাস্তা ক্রস করে বেরিয়ে মাঠে নেমে গেল। থমকে দাঁড়িয়ে একবার টর্চ টিপে দেখলাম। কিছুই দেখা গেল না। আবার এগোতে শুরু করলাম। দশ-বারো পা এগিয়েছি, মনে হল পেছন থেকে কিছু একটা চলে গেল। পেছন ফিরে একবার দেখলাম, কিছুই দেখতে পেলাম না। এও মনের ভুলই হবে, একা একা ফাঁকা রাস্তায় চলতে গেলে এরকম অনেক সময় হয়। তাই চলতে থাকলাম। দুরে মাঠের মাঝে দপ দপ করে আলো জ্বলে উঠে নিভে গেল। দমকা আলোয়ও দেখলাম কেউ যেন বসে আছে। কোন পুকুরের পচা জলের ফসফরাসের আলো হবে। কিন্তু পাশে কে বসে ? ফিরে যাব ?

কিন্তু ঐ কচি কাঁচা আর এক ঘর লোকের সামনে অপমান হবে, দেখাই যাক আগে কি আছে।
আরও কয়েকশ মিটার এগোলেই মন্দির, কিন্তু মনে হল মন্দিরের সামনে কারা যেন নড়াচড়া করছে। ভাবলাম কেউ মড়া পুড়াতে এসেছে হয় তো। কিন্তু তাহলে তো আলো জ্বলত। কি জানি, মস্তিষ্ক যত বিজ্ঞানের যুক্তি খোঁজে, মনের ভেতর ঠেকে কেউ যেন বলছে "ফিরে যা ফিরে যা"। ভয়ে ভয়ে এগোতে লাগলাম। আবার দেখি, মাঠের মাঝ থেকে কেউ যেন হেঁটে চলে গেল। জানিনা, আজ এক সঙ্গে এতো কি মনের ভুল হচ্ছে! আরও কয়েক পা এগিয়েছি, পেছন থেকে কেউ যেন নাকি শুরে ফিস ফিসিয়ে ডাকছে "প্রোঁদীইইইইইপ প্রোঁদীইইইইইপ "। আর এক দিক থেকে কেউ আবার যেন হেঁসে উঠলো ইহিঁহিঁহিঁহিঁ । একটু দুরে আবছা আলোয় কয়েকটা ছায়ামূর্তি যেন দেখা দিয়ে আবার অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। আমার তখন অবস্থা খারাপ। ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে। আমার বিজ্ঞানের যুক্তি গুলো সব যেন লোপাট হয়ে যাচ্ছে। শরীরের মধ্যে দিয়ে এক শীতল স্রোত অনুভব করলাম। শরীরের লোম খাড়া হয়ে উঠেছে। হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে। আর এগোব কি এগোব না ঠিক করতে পারছিনা এমন সময় কিছুদূরে একটা নাকিসুরে অল্পবয়সী মেয়ের কণ্ঠে কেউ কেঁদে কেঁদে বলছে "খিঁদে আঁমার খুঁব খিঁদেএএ... আঁমায় খেঁতে দেঁএএ"। কেউ একজন হিস হিসিয়ে ধমকে দিল "চুঁপ এঁকদম চুঁপ! দেঁখছিস না খাঁওয়ার আঁসছে। ওঁরেএএ ভুঁতুউউউউ ওঁটা ধঁরে আঁআঁআঁন..."। সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম পাশের গাছ থেকে একটা সাদা মূর্তি আমার সামনে এসে ঝুপ করে পড়ে দুই হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসছে। তখন আর কিছু করার নেই। পেছন ফিরে দৌড়ব ভেবে পেছনে ঘুরেছি, দেখি পেছনেও দুটো সাদা প্রেতাত্মা, কখন চলে এসেছে। এবার পায়ের মাটি যেন কেঁপে উঠলো। সারা শরীর অবশ হয়ে আসছে। নিজেই নিজের হৃৎস্পন্দন শুনতে পাচ্ছি। তখন কিছু করার নেই, অবচেতন মনেই আচমকা আমার হাতের লাঠি চলে গেল সামনের ভুত দুটোর দিকে। ঠ্যাং করে একটা শব্দ। দেখি একটা ভুত "বাবারে..." বলে উল্টো দিকে মেরেছে দৌড়। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না। আমিও জোরে দৌড় মারলাম। গিয়ে ধরে ফেললাম ভুত বেটাকে। ভুত বলে "এতো জোরে কেউ মারে?" তখন আস্তে আস্তে আসে পাশের মাঠ থেকে ভুত গুলো সব উঠে এলো। সঙ্গের পেত্নীটা ও। ভুতেদের নিয়ে মন্দিরের সামনে গিয়ে নাটা গাছের একটা ছোট ডাল ভেঙে নিয়ে ফিরে এলাম।

ফিরে শুনলাম বড়ো জামাইবাবু ঘুমিয়ে পড়েছেন। বুঝলাম - আমায় ভুতের ভয় দেখাতে গিয়ে, নিজেই হেরে ভুত হয়ে লজ্জায় সামনে আসছেন না।


● "শ্মশান কালীর মন্দির" গল্পটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা কিন্তু আমাকে জানাতে ভুলবেন না । আপনি আরো গল্প পড়তে আমাকে অনুসরণ করতে পারেন। গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।


মেহেদী হাসান পিয়াস 

No comments

Powered by Blogger.