ভুলের ফল

ভুলের ফল - Green Vivacity
ভুলের ফল - Green Vivacity


                  দীর্ঘ চার বছর অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে একটা ভালো চাকরি জোগাড় করে রাজু। চাকরি পাওয়ার পর গাড়ি, বাড়ি সবই ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে। অবশেষে নিজের প্রেমিকাকে বাদ দিয়ে বাবা-মায়ের পছন্দ মতো বিয়ে করে নেয় সে। তার স্ত্রী, একদিকে যেমন তার প্রেমিকার থেকে বেশি সুন্দরী, অপর দিকে উচ্চশিক্ষিতা। তাই সে তার প্রেমিকার দিকে আর ফিরেও তাকায়নি। তার স্ত্রী বেশ সংসারী, ভদ্র মহিলা। সংসারে কোনো ঝগড়া বা ঝামেলা ছিল না। শ্বশুর শ্বাশুড়ির সঙ্গে যেমন মিলে চলতো তেমনই স্বামীর উপরে নজর ছিল অপরিসীম। বেশ সুখেই কাটছিলো তাদের জীবন। এই ভাবে প্রায় বছর খানেক যাবার পর রাজুকে চাকরি সূত্রে কলকাতায় বদলি হয়ে আসতে হয়। স্ত্রী, বাবা-মা সবাইকে ছেড়ে একটা মেসে থাকতে শুরু করে সে। 

কিন্তু কলকাতায় আসার পর স্ত্রীর সঙ্গে সব সময়ই যোগাযোগ রাখতো সে ফোনে বা ফেসবুকে। তবে অধিকাংশ সময় ফেসবুক ব্যাবহার করত তারা। অবসর সময় ফেসবুকে কাটাতে গিয়ে এক অপরিচিত মহিলার সঙ্গে বেশ ভাব জমে ওঠে তার। অবসর সময়ে ফোন করে ডেকে নিয়ে ফেসবুক এ গল্প করতো তারা। বিষয়টা এমন পর্যায়ে পৌছালো যে রাজু তার স্ত্রীকে বাদ দিয়ে ওই মেয়েটিকেই বেশি সময় দিতে শুরু করে। কোনো কোনো দিন স্ত্রীর সঙ্গে কথা না হলেও ওই মেয়েটির সাথে গল্প করতে ভুল হতো না তার। 

মেয়েটির প্রেমে রাজু এতটাই মজে ছিল যে, সে বিবাহিত এটাও ভুলে গিয়েছিল সে। অবশেষে একদিন মেয়েটি তাকে দেখা করতে বলে চন্দ্রপুর বাসস্ট্যান্ড এ দুপুর এগারোটায়। সে দিন তার যেন খুশির শেষ নেই। এত দিনের চেষ্টা আজ সফল হবে। আজ সে তার প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে যাবে। সকাল থেকে প্রথম দেখা করতে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু। বেশ সেজেগুজে স্মার্ট লুক দিয়ে বেরিয়ে পড়ে। মেয়েটির কথা মতো এগারোটার আগেই চন্দ্রপুর বাসস্টান্ড এ পৌঁছে সে চমকে যায়। এখানে তার স্ত্রী আসলো কি করে ? 

স্ত্রীকে দেখে সে লুকিয়ে পড়ে। স্ত্রী কেন তাকে কিছু না বলে এখানে আসলো সে বিষয়ে তার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। সে ফোন বের করে মেয়েটিকে ফোন করার জন্য। ফোন রিসিভ করছে না বলে ফেসবুক খোলে সে। ফেসবুক খুলতেই দেখতে পায় ওই মেয়েটা তাকে একটা ম্যাসেজ করেছে। তাতে লেখাছিল, আমি রিয়া। তোমার স্ত্রী। এটা আমার ফেক একাউন্ট। এটা আমি খুলেছিলাম তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য। তুমি তোমার জীবনের সব পুরানো ঘটনা আমার থাকে লুকিয়েছিলে। এটাও লুকিয়েছিলে যে তোমার প্রেমিকা থাকা সত্ত্বেও আমাকে বিয়ে করেছ। 

যেদিন এটা জানতে পারি সেদিনই তোমার চরিত্র নিয়ে আমার মনে সন্দেহ জাগে। আজ সত্যিটা জানতে পারলাম, তুমি কেমন, তোমার চরিত্রই বা কেমন। আজ তোমাকে দেখা করতে ডেকেছিলাম, দেখা হলো, আর কোনো দিন হবে না। আমি আর তোমার সাথে থাকতে চাই না। ম্যাসেজটি পড়ার পর রাজু ছুটে রাস্তায় এলে দেখতে পায় তার স্ত্রী বাসে উঠেছে এবং বাসটি স্ট্যান্ড ছেড়ে রওনা দিয়েছে।

                                                            ........সমাপ্ত

"ভুলের ফল" গল্পটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা কিন্তু আমাকে জানাতে ভুলবেন না। আপনি আরো গল্প পড়তে আমাকে অনুসরণ করতে পারেন। গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।


মেহেদী হাসান পিয়াস

                                                                             ©

No comments

Powered by Blogger.