অন্ধকারের কথা

Bangla Love Story, Bangla Stories, Bangla Romantic Story, ভালবাসার গল্প, Fiction, Golpo, Story, Love, Ghost Story, Inspiration, Book Review, Boi Poka, Romance , Boi, Poka, Science, Poetry, History, Comics, Bangla PDF & Bangla Story, bangla love story - Real worlds, কৌতুক, টিপস, বিনোদন, Free bangla ebook, বাংলা গল্প, bangla story, download bengali ebook, story in bengali, golpo, bengali story, bangla golpo, golpo bd, bangla story, story, green, vivacity, green vivacity, নতুন গল্প, bd story teller, bd storytime, ছোটগল্প - short story, প্রেমকহিনী - Love story, রহস্যগল্প - Story of mystery, ভৌতিক গল্প - Scary story, সামাজিক গল্প - Social stories, কাব্য - Poetry, হাস্যকৌতুক - Funny, শিশু সাহিত্য - Children's Literature, ভ্রমণকাহিনী - Travel stories
অন্ধকারের কথা - Green Vivacity


                         সাইদুলের নেশা করার অভ্যাস সেই কলেজে পড়ার সময় থেকে। লোকে ঠিকই বলে- সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। তখন কিছু বাজে ছেলের সাথে গভীর বন্ধুত্বে জড়ানোর কারণেই আজ তার বর্তমান একেবারে অমাবস্যার রাতের মতই কালো। ভবিষ্যতের কথা বলাই বাহুল্য। মানুষ ছোটে সভ্যতার দিকে, আলোর দিকে, আর সাইদুল ছোটে অন্ধকারের দিকে ! যেন সে মানুষ নয়, একটা পশু ! তার জীবন ছুঁড়ে ফেলা কাগজের মতই মূল্যহীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার নিজের জীবনের কোনও মূল্য না থাকলেও তার স্ত্রী রিমা এবং একমাত্র ছেলে কাদেরের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার কোনও অধিকার তার নেই। রিমা প্রায় প্রতিদিন সাইদুলকে বোঝানোর জন্য হাজার বার চেষ্টা করে কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয় না। নেশাগ্রস্ত হয়ে রাতের পর রাত অন্য কোথাও পড়ে থাকে, কখনও বাসায় ফিরে এসে রিমার উপর রাগ ঝাড়ে। 

আগে সাইদুল শুধুই গাঁজা সেবন করত কিন্তু ইদানীং রিমা লক্ষ করেছে যে তার হাতের নানা স্থানে সুঁই ফোটানোর দাগ। বাসায় যতক্ষণ সে থাকে, স্বাভাবিকভাবেই তা আর বাসা থাকে না। রীতিমত একটা ছোটখাটো নরকে পরিণত হয়। রিমার খুব দুশ্চিন্তা হয় তার চার বছর বয়সী ছেলে কাদেরকে নিয়ে। যখন রিমার সাথে সাইদুলের চরম বাকবিতণ্ডা হয়, তখন কাদের হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে তার মাকে জড়িয়ে ধরে। এটুকু বাচ্চা হয়েও সে বুঝতে পারে যে তার বাবাই এসবের জন্য দায়ী। 

আগে সাইদুলকে দেখলে দৌড়ে তার কাছে আসত, দুষ্টুমি করত। কিন্তু এখন দেখলেই এক দৌড়ে মার কাছে চলে যায়। যেন কোনও ভুত দেখেছে ! টাকা পয়সা যা ছিল সব দিনে দিনে ফুরাতে থাকে সাইদুলের নেশাদ্রব্যের জোগান দিতে গিয়ে। রিমাকে সামাজিকভাবেও ছোট হতে হয় অন্য মানুষের কাছে। পাড়া প্রতিবেশীরা সাইদুলের বদ অভ্যাস নিয়ে কানাঘুষা করে যা রিমা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারে। এটা বুঝার জন্য রকেট বিজ্ঞানী হতে হবে না। মানুষের চাহনি দেখলেই সেটা অনুভব করা যায়। একদিকে রিমা দিনরাত এক করে আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করে যাচ্ছে যাতে সাইদুল সঠিক পথের দিশা পায়। 

অন্যদিকে সাইদুলের অবস্থা খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকেই যাচ্ছে। রিমা জানে না এসবের শেষ কোথায় ? কি যে আছে তার ভাগ্যে তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন। গাছের ফলে পচন ধরলে যেমন তার পতন হয়, তেমনই সাইদুলের অন্তরে পচন ধরেছে এবং মানুষ হিসেবে তার পতন হয়েছে। কেউ তাকে একটুও সম্মানের চোখে দেখে না। রিমা যে কয়েক মাসের জন্য কোথাও গিয়ে থাকবে তারও উপায় নেই কারণ দেশে তার আপনজন বলতে কেউ নেই বললেই চলে। তার এক ছোট ভাই আছে যে অনেক বছর ধরে কানাডায় থাকে। নাম মাকসুদ ইসলাম। 

মাঝে মাঝে তার সাথে ফোনে কথা হয়। সে তার বোনের দুঃখ দুর্দশার কথা সবই জানে। যাইহোক, অন্ধকার শেষে যেমন আলোর দেখা মেলে, তেমনই রিমার দুর্দশা অবসানের মুহূর্তও সন্নিকটেই চলে এসেছে। একদিন কাদেরকে নিয়ে বাজার করে ফেরার সময় তার পুরাতন প্রেমিক আসিফের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। রিমা অবশ্য তাকে খেয়াল করেনি। আসিফ তাকে ডাকতেই সে পেছন ফিরে দেখে এবং খুব অবাক হয় ! কারণ তার সাথে আবার কখনও দেখা হবে এমনটি সে কল্পনাও করেনি কখনও।

কেমন আছো রিমা ? এইতো কোনোরকম চলছে। তোমার কি খবর বল ? মোটামুটি আছি। বেশী ভালো না। বেশী ভালো না মানে ? কোনও সমস্যা ? কয়েক দিন আগে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে। কি বল ? সত্যি ? হ্যাঁ, সত্যিই বলছি। শুনে খুবই দুঃখ পেলাম। যখন ছাড়াছাড়ি হয় তখন আমারও খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমার স্ত্রী শিলার জন্য নয়, আমার পাঁচ বছরের মেয়ে নায়লার জন্য। তার জন্য বুকটা বড় কাঁদে। দেখো আসিফ, দুশ্চিন্তা করে আর কি লাভ ? যা হবার তা তো হয়েই গেছে। এখন নতুনভাবে জীবনটাকে তৈরি করে নিতে চেষ্টা কর। 

নতুনভাবে শুরু করতে বলছ ? ভাঙ্গা কাঁচ যেমন আর সহজে জোড়া দেয়া যায় না, তেমনই ভাঙ্গা মন জোড়া দেয়াও খুব কঠিন। কঠিন বলতে পারো, কিন্তু অসম্ভব নয়। থাক সেসব কথা। তোমার পরিবার সম্পর্কে কিছু বল। তোমার কোলের বাচ্চাটার নাম কি ? কাদের শিকদার। বাচ্চা কি একটাই ? হ্যাঁ। তারপর ? আমি আর কি বলব ? তোমার স্বামী কেমন মানুষ ? কি করেন, এইসব আর কি। আজ নয়, আরেকদিন বলব। তুমি এই রহমতগঞ্জে কি করে এলে ? আসলে আমি ব্যবসার কাজে এতদিন ইংল্যান্ড ছিলাম। দেশে এসেছি মাস দু-এক হয়েছে। 

এখানে আমার একজনের সাথে দেখা করার কথা। ওনার বাসা খুঁজতে খুঁজতেই তোমার দেখা পেয়ে যাব আমি কখনও ভাবিনি ! বাসায় চল, আমার স্বামীর সাথেও দেখা হয়ে যাবে। ধন্যবাদ, আজ নয়। দেখি অন্য কোনও দিন আসলে তোমার বাসাটা দেখে আসব। এখান থেকে কতদূরে তোমার বাসা ? কাছেই, ঐ যে তাল গাছটা দেখা যাচ্ছে, তার পাশেই একটা পুকুর আছে, সেই পুকুরের পারেই আমার বাসা। নিমন্ত্রণ রইল, আসলে খুব খুশী হব। চেষ্টা করব। এখন যাই। ভালো থেকো। খোদা হাফেজ। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে আসিফ এবং রিমার জুটির কথা সবার মুখে মুখে ফিরত। তাদের আত্মার মিলন যেন স্বর্গ হতেই নির্ধারিত ছিল। যেন দুটি শরীরে একই আত্মার উপস্থিতি ছিল। যেন রোমিও জুলিয়েট ! এমন অসাধারণ জুটি আর দুটি ছিল না। কিন্তু কোনও এক মারাত্মক ভুল বুঝাবুঝির কারণে এমন চমৎকার জুটি ভেঙ্গে কাঁচের আয়নার মত চুরমার হয়ে গেল। তাদের প্রেম যেন একটি বালির তৈরি প্রাসাদ ছিল যেটি সামান্য বাতাসের আঘাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। এদিকে সাইদুলের শরীরের অবস্থা দিন দিন খারাপ হতেই থাকে। 

অনেক দিন কোনও কক্ষ অযত্নে এবং অবহেলায় পড়ে থাকলে যেমন মাকড়সা এসে জাল বুনে দেয়ালগুলো ভরিয়ে ফেলে। তেমনই নেশা করতে করতে এবং দিনরাত খাবার অনিয়ম করতে করতে তার শরীরে বিভিন্ন রোগ বালাই বাসা বেঁধেছে। একদিন সাইদুল রাত বারোটার সময় বাসায় ফিরে যথারীতি রিমাকে ডাকতে ডাকতে চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু রিমার কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রত্যেকটি কক্ষে গিয়ে খুঁজতে থাকে। কিন্তু রিমা কোথাও নেই। পরে নিজের কক্ষে এসে বিছানায় ধপাস করে পড়ে যায়। 

নেশার ঘোরে শুয়ে থাকা অবস্থায় তার যখন ঘুম ঘুম ভাব, ঠিক তখন বালিশের কাছে রাখা একটি কাগজের টুকরোর উপর তার হাত পড়ে। সাইদুল চোখ আধ খোলা অবস্থায় সেই কাগজটি নিয়ে পড়তে থাকে। সেখানে রিমার হাতে লিখা কয়েকটি লাইন আছে, "আমার প্রতি তোমার কোনও ভালোবাসা নেই তা না হয় এতদিন মুখ বুজে সহ্য করেছি। কিন্তু তোমার একমাত্র নিস্পাপ ছেলেটির প্রতিও তুমি কখনও সামান্য ভালোবাসা কিংবা মায়া দেখাওনি। সবসময় তুমি তোমার নেশাকে এবং নিজের কুলাঙ্গার কিছু বন্ধুদেরকেই প্রাধান্য দিয়েছ। আমি শত চেষ্টা করেও তোমাকে সঠিক পথে ফেরাতে পারিনি। হয়তো আমার চেষ্টায় কোনও ত্রুটি ছিল। যাইহোক, আমি তোমার জীবন থেকে চিরতরে চলে যাচ্ছি। এখন তোমার যা ইচ্ছে হয় কর। কেউ তোমাকে বাধা দেবে না।"

ইতি, রিমা।

পরদিন সাইদুল বিভিন্ন স্থানে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও রিমা এবং তার ছেলের দেখা পায়নি। এলাকার লোকজন এ বিষয়টা নিয়েই আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত। যেন পৃথিবীতে আলোচনা করার জন্য আর কোনও বিষয় অবশিষ্ট নেই। বেশীরভাগ মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস যে রিমা হয়তো তার কোনও পুরাতন প্রেমিকের সাথেই চলে গেছে !

                                                            ........সমাপ্ত

"অন্ধকারের কথা" গল্পটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা কিন্তু আমাকে জানাতে ভুলবেন না। আপনি আরো গল্প পড়তে আমাকে অনুসরণ করতে পারেন। গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।


মেহেদী হাসান পিয়াস

                                                                             ©

No comments

Powered by Blogger.