রমাকান্তর ভুঁড়িভোজ

রমাকান্তর ভুঁড়িভোজ - Green Vivacity


                            "আজ একটু পুঁই-কচু রান্না কর তো মিনাক্ষী ।" বাইরের খাটিয়ায় বসে, আমার সত্তর বছরের দাদুরমাকান্ত ঠোঁটে জিভ বুলিয়ে বুলিয়ে কথাটি বলল।" বুড়োর পুঁই কচু খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে বউমা, এবারে ঝামেলা সামলাও।" মিনাক্ষী, মানে আমার ঠাকুরমা বিরক্ত মুখে আমার মা কে রান্না ঘরে কথা গুলি বলতে লাগল।" সকাল থেকে তিন তিন বার বাথরুম যাওয়া হয়ে গেছে তবু বুড়োর উদ্ভট সব খাবার খাওয়ার সখ মেটে না ?" আমার মা বিড়বিড় করে বলল । তবে রান্না ঘরে ই কথাগুলি সীমাবদ্ধ থাকে। আসলে দাদুর সামনে কথাগুলি বলার হিম্মত কারোর নেই। আমার দাদু একটু অন্য জগতের মানুষ। মা, ঠাকুমার ভাষায় একটা বিটকেলে বুড়ো। তবে মানুষটাকে আমার হেব্বি মজার লাগে। দাদুর প্রতিদিন একটা করে উদ্ভট খাবার খেতে ইচ্ছে করে। এই যেমন ধরুন আজ পুঁই-কচু, তো কাল কুমড়ো-চিংড়ি। কোনো দিন বা বলল, "মিনাক্ষী আজ একটু মুলো বেগুনের টক খাব ।" জানি এই খাবার গুলো একটু উদ্ভট ই বটে। কেউই খায় না। কোথায় একটু বিরিয়ানি টিরিয়ানি বলবে তা নয়, যত সব আজে-বাজে খাবার। উপরন্তু কেউ যদি বাড়িতে চাউমিন বানিয়ে খায় তো বলবে, "কি সব কেঁচো ভেজে খাচ্ছিস ?" কি করে যে এগুলো গিলিস কে জানে বাবা ?" অথচ নিজে এক কিলো কুমড়ো দিয়ে শ খানেক লুচি একাই খেয়ে ফেলে !

যেটা আমার মোটামুটি একমাসের টিফিন হয়। এরকম পরিমানের খাবার দাদু রোজ খায়। ভুড়ি খানাও বেশ খাসা বানিয়েছে দাদু ! আর যদি কেউ খাবার নিয়ে গন্ডোগোল করেছে তো তার গুষ্টি শুধু উদ্ধার করে দেয়। এই যেমন ধরুন দাদুর একবার শখ করে সিঙারা খাবার ইচ্ছে হয়েছিল। তো হয়েছে কি, সিঙারায় নুন বেশী হয়ে গেছে। ব্যস দাদু সমস্ত সিঙারা আমাদের বাড়ির বল্টু, রকি দের খেতে দিয়ে দিয়েছিল। আরে না এগুলো বাড়ির কচি কাচারা নয়। এগুলো রাস্তার সব কুকুর গুলো। আমাদের বাড়ির পাশেই ঘুর ঘুর করে। আসলে দাদু তাদের মাঝেমধ্যেই এরকম পার্টি দিয়ে দেয়। তাহলে বলুন তো কোন বাড়ির মেয়েরা এমন লোক কে খুব ভালো বাসবে ? তবে দাদু আমায় খুব ভালো বাসেন, আমিও খুব ভালোবাসি দাদুকে। দাদুর মুখে গল্প শুনতে বেশ ভালো লাগে। যদি ও বেশীর ভাগ টাই দাদুর নিজের গাঁজাখুরি গল্প। খাবার গল্প তো আছে ই। কোন লোকের বাড়ির, কোন হোটেলের, কোন বিয়ে বাড়ির সর্বনাশ করে এসছে এসব। কোন বিয়েবাড়িতে গিয়ে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর এনেছিল, এসব গল্প। একবার নাকি ঠাকুরের খিঁচুরি প্রসাদ খেতে গিয়ে তিন বালতি সাবাড়ে দিয়েছিল। ভাবুন দেখি, কি রাক্ষুসে দাদু আমার ! না এগুলো কিন্তু একটুও ঢপ দিতো না। কারন এর চাক্ষুষ প্রমান আমি অনেক পেয়েছি।

তাছাড়া আর একটা গল্প মনে পড়লে আমার এত্তো হাসি পায়, যে আপনাদের সাথে শেয়ার না করে পারছি না। গপ্পোটা হলো, দাদুর একবার একটা কাজে বাইরে গিয়ে খুব খিদে পেয়ে গেল। তো, দাদু হোটেল খুজছে। পরেই একটা হোটেলের সামনে একটা লোক ডাকছে যত খুশি ভাত খান, ১০ টাকায় ( তখন দশ টাকার মূল্য অনেকখানি )। ব্যাস দাদু কে আর পায় কে ? সোজা গিয়ে ঢুকে পড়ল, সাথে আর একজন বন্ধু কে নিয়ে। সে ও অবশ্য কম যায় না ভুঁড়িভোজে। ঢুকেই জিজ্ঞেস করল, "পেট ভরে ভাত পাব তো ?" হোটেলের মালিক বলল, 'অবশ্যই ।' তখন তো আর মালিক জানে না, কোন সুনামি এসে হাজির ? যাক দাদু আন আন ডাক ছেড়ে দিল। মোটামুটি আমার মতো দশ জনের খাবার দুজনে খেল। তারপর আবার ভাত চাইতে মালিক বলল, ভাত শেষ ! এরপর নতুন ভাত রান্না হচ্ছে। তখন দাদু বলল অপেক্ষা করছি, ততক্ষনে ভাতটাও হজম হয়ে যাবে আবার নতুন করে ক্ষিদেও পেয়ে যাবে। এবার মালিকের কান্না পাবার উপক্রম। যাই হোক রান্না শেষ হতে আবার দুজনে ৫ জনের ভাত খেয়ে ফেলল।আসার সময় পয়সা দিতে গেলে মালিক পয়সা নিল না। বলল পয়সা দিতে হবে না, শুধু আমার হোটেলে দ্বিতীয় বার আসবেন না দয়া করে, তাহলে খুশি হব।যাক দাদু অবশ্য দ্বিতীয় বার যায় নি ওই হোটেল টায়। এই হচ্ছে দাদুর গল্প। আপনারা লোকটার কোথা ভেবে কেঁদে ফেলবেন না ঘটনা শুনে হেসে ফেলবেন সেটা আপনাদের উপর ই ছেড়ে দিলাম।

এদিকে পুঁই-কচু রেডি হয়ে গেছে। দাদু আগেই স্নান করে বেশ গরম গরম জম্পেশ করে খাবে বলে বসে আছে। দাদুর খাবার থালা এল। থালার মাঝে বরফে ঢাকা হিমালয় পর্বত। দাদু সেই পর্বত কিছুক্ষনের মধ্যেই সাবাড়ে ফেলল। আর একটা বড়ো ঢেকুর তুলে বলল, " মিনাক্ষী কাল একটু পায়েস করিস তো, অনেক দিন পায়েস খাওয়া হয়নি !"



● "রমাকান্তর ভুঁড়িভোজ" গল্পটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা কিন্তু আমাকে জানাতে ভুলবেন না । আপনি আরো গল্প পড়তে আমাকে অনুসরণ করতে পারেন। গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।


মেহেদী হাসান পিয়াস

No comments

Powered by Blogger.