বড়দি
![]() |
বড়দি - Green Vivacity |
"চুপ করো, বড়দি ঘুমোচ্ছে"। চারপাশে আত্মীয়স্বজনের ভীড়টা অবাক হয়ে কবিতা কে দেখতে লাগলো। বউটার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল। নইলে মৃতা শীলাকে বলছে ঘুমোচ্ছে।
এই ঘটনার মুল কথা জানতে হলে পনেরো বছর পেছনে যেতে হবে। একান্নবর্তী বিশাল বাড়িতে অনেক বড় সংসার। পাঁচভাই, তিন বোন। বাড়ির ছোটোছেলে ছেড়ে সবাই বিবাহিতা, ছেলে মেয়ের মা বাবা।
বাড়িতে সবাই সুন্দর, শুধু চাঁদের কলংকর মতো বড়বউ ছাড়া। বুড়ি দিদিশ্বাশুড়ির মরনকালে ভিমরতি ধরেছিল। কবেকার সইয়ের ছেলে বউ মরা নাতনী নিয়ে কোনোরকমে দিন কাটাচ্ছিল। নাতনিটি আবার বেশ কালো, যদিও চোখেমুখে বেশ শ্রী আছে। এককথায় সেই বড়মা নিজের সবচাইতে বাড়ির সেরা নাতিটির সাথে বিয়ের ঠিক করে ফেললো। সবাই অনেক আপত্তি করেছিল। কিন্তু বড়মার কাছে কোনো আপত্তি টিকলোনা। বিয়েটা হয়ে গেল।
বিয়ের পর থেকে দাসীদের থেকেও সবাই তার সাথে খারাপ ব্যাবহার করতো। তার বর, একটা মেয়ে হতেই, বউকে নিজের ঘর থেকে পাঠিয়ে দিলো চিলেকোঠার ঘরে। ভাগ্যিস মেয়েটা বাপের মতো দেখতে হয়েছে।
এবার বাড়ির ছোটোছেলের বিরাট ধুমধাম করে বিয়ে হলো। খুব বড়লোকের সুন্দরী মেয়ে। প্রচুর গয়না তত্ব, ফার্নিচার, শাড়ির পাহাড় এনেছে। সবাই ওকে কিভাবে খুশী করবে ভেবে পায়না। শীলাকে কেউ চোখেই দেখতে পায়না। সারাদিন সবার খালি সেবা করে যাচ্ছে নিস্তব্ধে। কি খাচ্ছে, আদপে খাচ্ছে কিনা, কেউ জানেনা। মেয়েটা পর্যন্ত এবাড়ির ধারা পেয়েছে, মাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা। শীলা নিজেকে আরো গুটিয়ে রাখে। কিছুদিন পরে শীলার ওপর একজনের দৃষ্টি পড়লো, সে হলো, কবিতা। কবিতা ভেবে পেতোনা,এত নরম এত ভালমানুষ দিদির সাথে সকলে কেন এত খারাপ ব্যাবহার করে।
শীলা আর কবিতার সবার চোখের আড়ালে প্রবল টান, ভালবাসা গড়ে উঠল। কবিতা লুকিয়ে লুকিয়ে ভাল মাছের পীস, কখনো মিষ্টি দিদির পাতে দিয়ে দিত। দিদিতো সবার শেষে রান্নাঘরে লুকিয়ে খেত, কেউ খোঁজ ও রাখত না।
একবছর কেটে গেল। মাঝে মাঝে শীলার বুকে ব্যথা উঠতো, কিন্তু কাউকে কখনো বলেনি। একদিন কবিতা দেখল, দিদিকে বুকে হাত বোলাতে। কিন্তু শীলা হেসে এড়িয়ে গেল। এদিকে কবিতা বাচ্চা হতে বাপের বাড়ী গেছে।
একূশদিন কেটে গেছে, আজ কবিতা কচি ছেলে নিয়ে বাড়ি ফিরবে। সবাই খুশীতে ডগমগ। গাড়ি নিয়ে ছোটোছেলে আনতে গেছে।
হঠাৎ কেউ আবিষ্কার করলো বড়বউ কিভাবে বেঁকে নিজের ঘরে লুটিয়ে আছে। হাতের মুঠোয় ধরা একটা নতুন কাঁথা আর পাশেই ছুঁচ সুতো।
কবিতা বাড়ি এসে শুনেই জমে পাথর। তারপর শীলাকে শোয়ানো হয়েছে। সবাই কবিতাকে ঘরে যেতে বলছে কচি ছেলেকে নিয়ে। কিন্তু কবিতা,শীলার পাশে বসে সমানে বলছে,"তোমরা চুপ করো, বড়দিকে ঘুমোতে দাও, বড়দিকে একটু শান্তিতে ঘুমতে দাও"।
● "বড়দি" গল্পটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা কিন্তু আমাকে জানাতে ভুলবেন না । আপনি আরো গল্প পড়তে আমাকে অনুসরণ করতে পারেন। গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।
মেহেদী হাসান পিয়াস
No comments