রাজযোটক -- {প্রথম পর্ব }

রাজযোটক - Green Vivacity
রাজযোটক - Green Vivacity



                         হাই স্কুলের শিক্ষক অমিত বসু সকালে বাড়ীর ড্রয়িংরুমে ছাত্রদের পড়াচ্ছেন। বাজার থেকে চুনোমাছ কিনে এনেছেন। গিন্নী রাণুদেবীর মেজাজ এখন সপ্তমে ! সকাল দশটার মধ্যে ভাত খেয়ে নয় বছরের ছেলে ও স্বামী স্কুলে যাবে। তারপরে তিনি অবসর সময়ে টিভি সিরিয়াল দেখে কাটাবেন। বিকালে বন্ধু বান্ধবীদের সাথে বেড়ানোর পোগ্রাম থাকে। বেরসিক গ্রাম্য স্বামীকে নিয়ে কোথাও যেতে চান না। রাণুদেবী ভিতরের ঘর থেকে রেগে বললেন, "এই মাছ আমি কুটতে পারব না। চুনোমাছ খাওয়ার যখন এত সখ নিজে এসে কুটে দিয়ে যাও।" দেখছোতো আমি ছাত্র পড়াচ্ছি। যাব কি করে ? বিনা পয়সায় ছাত্র পড়ানোর চেয়ে আমায় রান্নায় সাহায্য করলে লাভ হয়। রাণুদেবীর রাগ হয়েছে দেখে নিরীহ অমিতবাবু চুপ করে থাকেন। প্রতিবেশী দীপক রায় তার পনেরো বছরের মেয়েকে নিয়ে এসেছেন মাস্টারমশাইয়ের কাছে বায়োলজী পড়াবার জন্য। তিনি অমিতবাবুকে বললেন, "আমার মেয়ে নাইনে পড়ে। 

আপনার কাছে লাইফ সায়েন্স পড়বে। আপনি সপ্তাহে কদিন পড়ান ?" অমিতবাবু ছাত্রদের নোটস দেওয়ার মাঝে বললেন, "মেয়েকে সোম, মঙ্গল ও বুধবার সকালে পাঠিয়ে দেবেন। আপনি আমাদের পালপাড়ায় মাস ছয় আগে বাড়ী করেছেনতো ?" হ্যাঁ মাস্টার মশাই এখন আমি আপনার প্রতিবেশী। আমার নাম দীপক রায় । কৃষ্ঞনগরে সেটেলমেন্ট অফিসে কাজ করি। ছাত্রদরদী মাস্টার বলে পাড়ার সবাই আপনার নাম করে। "দীপকবাবু প্রথম বাড়ীতে এলেন। বসুন চা খেয়ে যান।" অমিতবাবু উঠে ভিতরের ঘরের পর্দা তুলে স্ত্রীকে বললেন "কইগো ভদ্রলোক প্রথম ঘরে এসেছেন এক কাপ চা করে দাও।" 

আমি এখন চা করতে পারব না। তুমি নিজে চা করে খাওয়ায়।" স্ত্রীর বজ্রকন্ঠ শুনে অমিতবাবু বললেন "কি এমন কাজ করছ যে এককাপ চা করতে পারবে না !" অমিতবাবু ঘুরে এসে চেয়ারে বসে ভিতর থেকে হুঙ্কার শুনতে পান "তোমার স্কুলে যাওয়ার পিন্ডি রাঁধছি। সময় নেই।" একটু পরে দুকাপ চা এনে রাণুদেবী টেবিলে রেখে রাগ দেখিয়ে চলে গেলেন।অমিতবাবু দীপকবাবুকে চা খেতে বলে চায়ে মুখ দিয়ে বুঝলেন একদম চিনি দেয়নি। তিনি বললেন-" চায়ে চিনি দিয়ে যাও।" রাণুদেবী রাগে গজ গজ করে এসে চিনির কৌটোটি একহাত দুরে দাঁড়িয়ে টেবিলে প্রায় ছুড়ে দিলেন। কৌটোর ধাক্কা লেগে দীপকবাবুর জন্য রাখা চায়ের কাপ উল্টে বই খাতায় চা লাগল। 

একটি ছেলে বলল "স্যার আমার খাতাটা নষ্ট হয়ে গেল।" প্রতিবেশী দীপকবাবু বললেন "অমিতবাবু ইনি আপনার কে হন ?" "ইনি আমার সহধর্মিনী। আপনাকে আর চা খাওয়াতে পারলাম না। মেয়েকে কাল থেকে পড়তে পাঠাতে পারেন।" চিন্তিত দীপকবাবু বললেন "আপনি কি শুধু এই ঘরে পড়ান ?" হ্যাঁ, আমি বাড়ীতে পড়াই। অমিতবাবুর কন্ঠ ছাপিয়ে স্ত্রী কন্ঠ শোনা গেল। বাবা মা যে কেন স্কুল মাস্টার দেখে বিয়ে দিল। এতবছরে একটা স্কুটার কিনতে পারল না। দেখো গিয়ে পাশের বাড়ীর অলক পাঁচ বছর স্যানিটারী ব্যবসা করে গাড়ী কিনে ফেলেছে।" দীপকবাবুর মুখ দিয়ে শব্দ বের হল "ভয়ঙ্কর।" 

পরিবেশ দেখে মেয়েকে এখানে পড়তে পাঠানোর ইচ্ছা হল না।" মেয়েকে কবে পড়তে পাঠাব আপনাকে পরে জানাব।" বলে দীপকবাবু কন্যাসহ বিদায় নিলেন। অলক আজ বাজার থেকে মুরগীর মাংস, ইলিশ মাছ ও একগাদা সব্জী কিনে মোটর সাইকেলে বাড়ী এসে দেখে স্ত্রী দেবলীনা বিছানায় শুয়ে। আজ পনেরোই আগস্ট। বন্ধুদের নিয়ে মাংস হুইস্কি খেয়ে স্বাধীনতা দিবসে আনন্দ করবে। ঘরে এসে শোনে স্ত্রী অসুস্থ। সে স্ত্রীকে বিছানা থেকে টেনে তুলে বলল, "লীনা উঠে জমিয়ে চিলি চিকেন রাধো।" আমার জ্বর। এতো রাধতে পারব না। ওগো আজ আমায় রেহাই দাও।" 

স্ত্রীর কথায় উত্তেজিত অলক বলল, "পারব না বললেই হল। বন্ধুদের সাথে খানাপিনা হবে। জলদি রান্না করতে যাও।" দয়া করে আমাকে একটু বিশ্রাম দাও। শরীরে এত অত্যাচার সহ্য হয়না।"  তাহলে বাবার বাড়ীতে গিয়ে বিশ্রাম নাও।" বিয়ে করেছি স্বামীর ঘরে থাকার জন্য আমি চলে গেলে তুমি পাশের বাড়ীর রাণুবৌদির সাথে ফস্টিনষ্টি করতে পারবে।" অলক স্ত্রীর একরাশ কালো চুলের গোছা হাতে ধরে টেনে বলল, "এতই যখন থাকার সখ বাবার কাছ থেকে একলাখ টাকা নিয়ে এসো। বিয়ের সময় দেবে বলে এখনও টাকা দিল না কেন ?" ব্যাথায় কাতর দেবলীণা বলল, "চুল ছাড়ো লাগছে। 

আমার গরীব কেরাণী বাবা আর টাকা দিতে পারবে না।" অলক দেবলীণাকে ধাক্কা দিল। ও পড়ে যাচ্ছিল। মেঝেতে বসে হাত দিয়ে সামলাল। ছয় বছরের মেয়েটি ভয়ে বলল, "বাবা তুমি মাকে মারছ কেন ? মায়ের জ্বর হয়েছে।" অলক বলল, "মা মেয়ে দুজনাই মামার বাড়ীতে থাকবি।" দেবলীনা রান্না ঘরে যাওয়ার পথে রেগে বলল, "আমি এখান থেকে কোথাও যাব না। রাণুবৌদির সঙ্গে প্রেম করা বের করছি। অমিতদা নিরীহ মানুষ। বউকে কিছু বলতে পারে না। আমি তোমাকে ছাড়ব না।" অলক হেসে বলে "রাণুবৌদি বারে গিয়ে স্কচ খায়, তুমি বাড়ীতে মদ খেতে পারো না। 

তোমাকে নিয়ে থাকব কি করে ?" দেবলীনা অশ্রু সজল চোখে বলল "তুমি পরস্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখ। আমি ঘেন্না করি তোমাকে। আবার যদি আমাকে মারো আমি থানায় গিয়ে জানাব।" ক্লাবের সেক্রেটারীর সাথে আমার উঠা বসা। আমায় কেউ কিছু করতে পারবে না। যাও রান্না চাপাও বন্ধুরা এসে পড়বে। দেবলীনা চুড়িদারের ওড়নায় চোখের জল মুছে অসুস্থ শরীরে রান্না ঘরে ঢোকে। মনে ভাবে যদি নার্সারির স্কুলের চাকরিটা পায় মেয়েকে নিয়ে চলে যাবে। অমিতবাবু সন্ধ্যায় স্কুল থেকে ফিরে দেখল স্ত্রী সাজগোজ করে সিনেমা যাওয়ার জন্য তৈরী। রাণুদেবী বললেন "আমি অলকের সঙ্গে কৃষ্ঞনগরে নাইটশো সিনেমা দেখতে যাচ্ছি। তরকারী ভাত করে দিয়ে গেলাম। 

তোমরা বাপ ছেলে খেয়ে নেবে। আমি হোটেলে খেয়ে আসব।" মৃদু প্রতিবাদ করে অমিতবাবু বললেন "রাণু আমি নিষেধ করছি তুমি অলকের সাথে সিনেমা দেখতে যাবে না। অলক বাজে লোক।" তুমি নিষেধ করার কে ? ভেবছো তোমার কথায় আমি সিনেমা দেখতে যাওয়া বন্ধ করে দেব ?" তুমি আমার সঙ্গে সিনেমায় যাবে ? তোমার মতো মেনিমুখো আন স্মার্ট লোকের সাথে সিনেমা যেতে আমার ভাল লাগে না। প্রতিবেশী যুবক অলক মোটর সাইকেলে বাড়ীর দরজায় এসে বলল "রাণুবৌদি চলে এস। পক্ষীরাজ রথ নিয়ে এসেছি।" রাণুদেবী স্বামীকে হাতের আলতো ধাক্কায় সরিয়ে বেরনোর সময় ছেলেটি আঁচল ধরে আব্দার করল "মা আমি তোমার সাথে সিনেমায় যাব।" 

রাণুদেবী ছেলেকে ধমক দিলেন। আমি কোথাও গেলে ফেউ হওয়া চাই।যেমন বাবা তেমনি ছেলে। ঘরে বসে পড়াশুনা কর। নরম মানুষ অমিতবাবুর চোখের সামনে স্ত্রী পর পুরুষের কোমর ধরে মোটর সাইকেলে চলে গেল। মা বাবার পছন্দ করে দেওয়া স্ত্রীর স্বেচ্ছাচার মুখ বুজে সহ্য করছেন। বাবা মারা গেছে। মা কলকাতায় দাদার কাছে থাকে। এমনিতেই লোকে আড়ালে ঠাট্টা করে। বাঁধা দিলে তেড়ে মারতে আসবে। পাড়ায় মুখ দেখানো দায় হবে। সন্ধ্যায় দেবলীনাদের বড় বারান্দায় বসে ওর মেয়ে অমিতবাবুর ছেলে ও আরো দুটি পাড়ার ছেলের সাথে ক্যারাম খেলছে। অমিতবাবুর ছেলে ইলিশ মাছ ভাজার গন্ধ পেয়ে ওর মেয়েকে বলল "তোদের আজ রাতে ইলিশ মাছ রান্না হচ্ছে ?" 

কথাটা কাণে যেতে দেবলীনা বলল, "যীশু আজ তোর মা কি রান্না করে সিনেমা দেখতে গেছে ?" কাকীমা দ্যাখোনা মা আমাদের জন্য আলু পটলের তরকারী ভাত রেখে গেছে। নিজে কাকুর সাথে হোটেলে মাংস খেয়ে আসবে। যীশুর দুঃখের কথা শুনে দেবলীনা নিজের মনে বলল, "তোর মা বড় নির্মম। দেবতুল্য লোকের ভাগ্যে পাষাণী বউ জুটেছে।" দেবলীনা চার পিস ইলিশ মাছের ঝাল বাটিতে দিয়ে বলল, "তোর বাবাকে দিয়ে বলবি কাকীমা খেতে দিয়েছে।" পাশের বাড়ীর অলকের বউ ইলিশ মাছ পাঠিয়েছে দেখে অমিতবাবু খুশী হলেন। ভদ্র সভ্য মেয়েটি মাতাল অমানুষ স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অলকটা দুটো জীবন নষ্ট করছে। বিয়ের পর বাপের বাড়ীর টাকা আদায়ের জন্য শাশুরী স্বামী দুজনে দেবলীনার উপর নির্যাতন করত। 

শাশুরী মারা গেলেও স্বামীর অত্যাচার চলছে। সপ্তাহখানেক আগে অলক কাচের বোতল দিয়ে দেবলীনার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল। পাড়ার লোকেদের নিয়ে অমিতবাবু অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়েছিল। অলক অপমান করে বলেছিল, "মিনমিনে মাস্টার নিজের বউকে সামলাতে পারেন না। আমাদের স্বামী স্ত্রীর ঝগড়ার মাঝে আসবে না।" অমিতবাবু দেবলীনাকে বলেছিল অলকের নামে থানায় অভিযোগ জানাও। ও রাজী না হয়ে বলেছিল, "স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে বাবা মায়ের কাছে উঠতে হবে। অমিতদা আমি মুখ বুজে সহ্য করে দেখি ওকে পাল্টানো যায় কিনা ?" একটা চাকরি জুটলে ওকে আমি ডিভোর্স দিব। 

অমিতবাবু ছেলের সঙ্গে খেতে বসে ভাবেন দেবলীনারতো মুক্তির পথ আছে। কিন্তু ওর স্ত্রী পরপুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রাখবে তবু ডিভোর্স করতে পারবেন না। স্ত্রীকে খরচের টাকা দিতে বেতনের টাকা চলে যাবে। অলক ও রাণু হলে দেহ সান্নিধ্যে বসে সিনেমা দেখে রেস্টুরেন্ট বারে ঢুকে খাচ্ছে। অলক বলল "রাণু তোমার মেনিমুখো স্বামী আমাদের ভালবাসার কথা জেনে গেলে তোমাকে বাড়ী থেকে বার করে দিতে পারে।" রাণু ব্রান্ডির গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল, "অতো হিম্মৎ ওর হবে না।" বিশ্বাস নেই। তুমি মেনিমুখোকে বলে বাড়ির উইলটা তোমার নামে করে নাও। তাহলে তুমিই স্বামীকে বের করে দিতে পারবে। 

অলকের পরামর্শ শুনে রাণু বলল, "বাড়ী জায়গা আমার শ্বশুর ওর নামে লিখে দিয়েছে। আমার নামে উইল করতে উকীল লাগবে।" অলক এক গ্লাস ব্রান্ডি চুমুকে শেষ করে বলল, "উকীল আমি পাঠিয়ে দেব। রাণু তুমি ছলে বলে কৌশলে তোমার স্বামীকে রাজী করাও।"  "আমার ভাই হাইকোর্টের উকীল। ওকেই ডেকে আনব।" রাণু রাত এগারোটায় ঘরে এল। অমিতবাবু ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। দেড় বছর হল ওরা স্বামী স্ত্রী ভিন্ন খাটে শোয়। রাণু বরাবরই কটুভাষী রুঢ় প্রকৃতির। প্রায় এক বছর হল অলকের সাথে অন্তরঙ্গতা বাড়াতে স্বামীর প্রতি খুব দুর্ব্যবহার করছে। 

আজ রাণু ঘুমন্ত ছেলেকে রেখে অমিতবাবুর শয্যায় শুয়ে ওকে বাহুবন্ধনে জড়াল। রাণু মুখে ঠোঁট ছোয়াতেই অমিতবাবু নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলল, "রাণু তোমার মুখে মদের গন্ধ। তোমার হিরো অলকের সাথে রাতটা কাটিয়ে এলে না কেন ?" ছি ছি আমি কি চরিত্রহীন। ভাইয়ের বয়সী অলকের সঙ্গে সিনেমা দেখতে যাই। শিবের মতো স্বামী থাকতে কোন দুঃখে চরিত্রহীন হব !" রাণু স্বামীকে ধরে সহবাসে উৎসাহিত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শেষে ঘুমাল। সকালে অমিতবাবু বিছানা থেকে উঠার সময় রাণু ওর কোমর জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে বলল, "তুমি আমায় ভালবাসো না ?" 

তুমি হিরো অলকের সাথে পাকাপাকি থাকতে পারো। অমিতবাবুর কথায় রাণু অনুনয় করল, দয়া করে ঐ ছেলেটাকে আর আমাদের মাঝে এনো না। তুমি আমাকে একদম বিশ্বাস কর না। তুমি বিশ্বাসের মর্য্যাদা রাখোনি। রাণু কোমল স্বরে বলল তুমি বেশ কিছুদিন আগে বলেছিলে তোমার স্কুলের বন্ধু শিক্ষকরা স্ত্রীর নামে জায়গা বাড়ী কিনেছে।তারা স্ত্রীকে কত ভালবাসে। তাদের স্ত্রীরা প্রকৃত ভালবাসে। স্বামী অন্ত প্রান। তুমি বিশ্বাস রেখে বাড়ীটা আমার নামে করে দাও। দেখবে তোমার বন্ধুদের স্ত্রীদের থেকে আমার ভালবাসা অনেক বেশী। তুমি বিশ্বাসের যোগ্য নও। 

বাড়ী তোমার নামে কখনো করব না। জোর গলায় বলে অমিতবাবু বিছানা ছেড়ে উঠে বাথরুমে গেল। তারপর থেকেই রাণু বাড়ী তার নামে উইল করে দেওয়ার জন্য মানসিক নির্যাতন শুরু করল। অলকের সাথে সম্পর্ক বজায় রইল। একদিন রাত দশটার সময় অমিতবাবু ডাইনিং টেবিলে এসে শুনলেন স্ত্রী রান্না করেনি। রাণু বলল কাল দশটার সময় আমার উকিল ভাই আসবে। তুমি কথা দাও বাড়ীর দলিল আমার নামে করে দেবে। আমি এখনই রান্না করব।এখন হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে। অমিতবাবু একগ্লাস জল খেয়ে শুয়ে পড়লেন। তাও রেহাই নেই। রাণু পাশে শুয়ে গজ গজ করছে। 

মাঝে মাঝে পিঠে কিল মারছে।অমিতবাবু উত্তেজিত হয়ে বললেন তোমার জন্য রাতে আমি বাড়ী ছেড়ে বেরিয়ে যাব। অন্যদিকে পাশের বাড়ীতে শয্যায় শুয়ে অলক দেবলীনাকে বুকে চেপে ধরে আছে। সহবাসের ক্ষুধা মেটাতে চায়। দেবলীনা ছাড়া পেতে মিনতি করছে। প্রতিরাতে এই ধকল আমার দেহ সহ্য করতে পারে না। অঙ্গে ব্যাথা লাগে। ওগো আমায় ছেড়ে দাও। আমি মেয়ের কাছে গিয়ে শোব। অলক বাহুমুক্তি না দিয়ে বলল খবরের কাগজে স্বামীদের জাপানী তেল ব্যবহার করতে বলছে। না হলে স্ত্রীরা তৃপ্তি পাচ্ছে না। সংসার ভেঙে যাচ্ছে। কিছু না ব্যবহার করতেই তুমি কাহিল হয়ে যাচ্ছ ! 

স্বামীর বুকে অস্থির হয়ে দেবলীনা বলল পশুরা শুধু দেহ নিয়ে থাকে। মানুষের মধ্যে ভালবাসা থাকে। তোমার একটুও ভালবাসা নেই। দেখলামতো রাণুর খুব লড়াই করার ক্ষমতা আছে। অলকের কথায় রেগে দেবলীনা বলল তুমি পশুর অধম হয়ে গেছ। পরস্ত্রীর সঙ্গে ব্যাভিচার করে নিজের স্ত্রীকে বলতে মুখে আটকাচ্ছে না। দেবলীনা জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অন্য বিছানায় ঘুমন্ত মেয়ের পাশে শুয়ে পড়ল। পরেরদিন সকাল নটার সময় অমিতবাবু ছাত্র পড়িয়ে বাথরুমে স্নান করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। সবে মাঘ মাস পড়েছে।গীজার নেই। 

ওয়াটার হিটার দিয়ে গামলায় জল গরম করছেন। রাণু এসে রুদ্রমুর্তি ধরে বলল তুমি আজ স্কুলে যাবে না। এখন আমার ভাই আসবে। বাড়ীটা আমার নামে লিখে দাও। না আমি বাড়ী লিখে দেব না। বিরক্ত করো না বলে অমিতবাবু পায়জামা পরে তোয়ালে কাঁধে বাথরুমে যাচ্ছেন। তবেরে চান করাচ্ছি। হুঙ্কার করে রাণু গামছা দিয়ে ধরে গরম জলের গামলা তুলে অমিতবাবুর কাঁধে পিঠে জল ছুঁড়ে দিল। অমিতবাবু প্রচন্ড যন্ত্রণায় মাগো জ্বলে গেল আর্ত চীৎকারে মার্বেলের মেঝেতে শুয়ে ছটফট করছেন। 

মা বাবাকে গরম জল দিয়ে পুড়িয়ে দিলে বলেই অমিতবাবুর ছেলে কাঁদতে কাঁদতে পাশের বাড়ীতে গিয়ে দেবলীনাকে জানাল কাকীমা মা বাবাকে গরম জল ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছে তুমি চল। অলক সকালে দোকানে গেছে। দেবলীনা যীশুর হাত ধরে বাড়ীতে এসে দেখল অমিতবাবু মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছেন। পিঠে বড় বড় ফোস্কা পড়ে গেছে অমিতবাবুর কষ্টে দেবলীনার চোখে জল এল। রাণুবৌদি তুমি দেবতুল্য স্বামীর উপর এত অত্যাচার করলে ? দেবলীনার কথায় অনুতাপহীন রাণু বলল বেশ করেছি। কেন আমার কথা শোনেনি। 

খবর পেয়ে পাড়ার সতেরো আঠারো বছর বয়সী অমিততবাবুর দুই ছাত্র ও এক প্রৌড় লোক ঘরে ঢুকে পড়েছেন। তারা বলাবলি করছে মাস্টারমশাইয়ের বউ একটা ডাইণী। ভয়ে রাণু ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।পাড়ার লোকেরা অমিতবাবুকে অটো রিক্সায় তুলে কৃষ্ঞনগর হাসপাতালে ভর্তি করল। দেবলীনা নিজের মেয়ে ও যীশুকে নিয়ে হাসপাতালে এল। এমারজেন্সীতে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ডাক্তার অমিতবাবুকে বার্ণিং ওয়ার্ডে রেখেছেন। ডাক্তার বললেন আপনার স্ত্রী গায়ে এভাবে গরম জল ছুড়ে মারল কেন ? অমিতবাবু ক্ষীণ কন্ঠে বললেন আমার বাড়ীটা ওর নামে লিখে দিইনি তাই ও গরম জল গায়ে ঢেলেছে। সাংঘাতিক স্ত্রী ! আপনি ওর নামে থানায় অভিযোগ করুন। এই গরম জল পিঠে না লেগে বুকে পড়লে মারা পড়তেন। এখন পুলিশকে জানিয়ে লাভ নেই। ছেলেতো সাক্ষী আছে। ঐ স্ত্রীর সাথে ঘরে থাকলে আপনাকে মেরে ফেলতে পারে। যন্ত্রণাকাতর কন্ঠে অমিতবাবু বললেন ডাক্তারবাবু আমি ছেলে নিয়ে অন্য জায়গায় থাকব। চিকিৎসাকারী নার্স বললেন কোন মহিলা স্বামীর উপর এমন নিষ্ঠুর অত্যাচার করতে পারে প্রথম দেখলাম। দেবলীনা বেডের পাশে বসেছিল। ও বলল ওনার স্ত্রীর অন্য পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে। সেই লোকটার কথায় এই অত্যাচার করেছে। আপনি অমিতবাবুর কে হন ? ডাক্তারের প্রশ্নে দেবলীণা বলল আমি অমিতদার প্রতিবেশী।

                                                           ........সমাপ্ত

"রাজযোটক" গল্পটির প্রথম অংশ পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা কিন্তু আমাকে জানাতে ভুলবেন না। আপনি আরো গল্প পড়তে আমাকে অনুসরণ করতে পারেন। গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।


মেহেদী হাসান পিয়াস

                                                                             ©

No comments

Powered by Blogger.