একজন রেলপ্রেমীর কথা
![]() |
একজন রেলপ্রেমীর কথা - Green Vivacity |
রেল সম্পর্কে মনের অনুভূতি
ডিউটি শেষ করে হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ঢুকছিলাম কারণ আজকের তোলা ট্রেন বিভিন্ন ছবিগুলো বিভিন্ন গ্রুপ এ আপলোড করতে হবে না হলে আমার পেটের ভাত পুরোটাই অপাচ্য থেকে যাবে। প্রসঙ্গত বলে রাখি এটা আমার একটি নিত্যনৈমিত্তিক কাজের মধ্যেই পড়ে !
পথিমধ্যে স্থানীয় এক পাড়াতুতো কাকার ডাকে একটু বিরক্ত হয়েই (এই জন্যেই বিরক্ত উৎপাদিত হয়েছিল যে, ট্রেন এর ফটো আপলোড করতে দেরি হয়ে যাবে) দাঁড়ালাম মানে দাঁড়াতে হলো। ভদ্রলোক সম্পর্কে আমার বাবার বন্ধু হলেও আমার সাথে সেভাবে কোনোদিনই কথা হয়নি। যাই হোক ভদ্রলোক কোথায় পোস্টিং, বর্তমান বেতন কত, কবে বিবাহবন্ধনে (আমার মতে হাড়িকাঠে গলা) এসব জিজ্ঞাস্য সহ সাম্প্রতিক পে কমিশন এর বেতনবৃদ্ধি নিয়ে আহ্লাদ প্রকাশ করেছিলেন (প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ভদ্রলোকের একজন বিবাহযোগ্যা কন্যা রয়েছে ) ।
কথায় কথায় আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন "তোমার শখ কি ?" প্রত্যুত্তরে বললাম রেল কে ভালোবাসা।
সাধারণ চিন্তাভাবনার প্রকাশ ঘটিয়ে তিনি বললেন, "হে হে সে তো বটেই, রেলওয়েতে যখন আছো তখন তো তাই সম্ভব।" আমি তখন বললাম আমি রেলওয়ের ট্র্যাক, ইঞ্জিন, সিগনাল, হর্ন এসবের মধ্যে হারিয়ে যেতে চাই, মিশে যেতে চাই এদের সাথে। ভদ্রলোকের মুখের অভিব্যক্তি দেখে বুঝলাম তিনি আমার মধ্যে কিছু অস্বাভাবিকতা খুঁজে পেয়েছেন। তারপর যখন বললাম ইঞ্জিন আমার প্রেমিকা, তখন আমার আপাদমস্তক একবার ভালো করে নিরীক্ষণ করলেন, মনে মনে হয়তো ভাবলেন যে আর কিছুদিনের মধ্যে মানসিক হাসপাতাল আমার একমাত্র উপযুক্ত জায়গা। অবশেষে "আমি আসি" এই ছোট্ট শব্দটুকু উচ্চারণ করে হনহন করে বাড়ির দিকে হাঁটা লাগালেন। আমি নিশ্চিত ছিলাম আজ হোক বা কাল হোক আমার বাবার কাছে ঠিক এসে বলবেন "ছেলেটার বিয়ে থা দাও, নাহলে মাথায় বিকার দেখা যাবে !"
যাই হোক, রেলওয়ে এর প্রতি ভালোবাসার নেশা যার মধ্যে একবার ঢুকে গেছে, একমাত্র সে অনুভব করতে পারবে এই নেশার কাছে অন্য কোনো মাদকের নেশা অতীব তুচ্ছ। ছোটবেলায় মাঝে মাঝে দুপুরবেলা বাবা-মা যখন ভাতঘুম দিত, আমিও সেই ফাঁকে উঠে চলে যেতাম রেললাইন দেখতে। সব ছেলেরা যখন মাঠ দাপিয়ে খেলত কিংবা মেয়েদের দিকে তাকিয়ে নিজেদের নীল আকাশে উড়ন্ত প্রজাপতির ন্যায় ভাবতো, তখন আমি চলে যেতাম কোনো রেলট্র্যাক এর পাশে, সেখানে কোনো রেল ক্রসিং এর পাশে দাঁড়িয়ে দেখতাম 'রাজা' এর আসা যাওয়া। গেটম্যান কিভাবে খবর পায় যে ট্রেন আসবে, কিভাবে সিগনাল হবে সেই সময়েই ছিল এগুলো আমার কৌতূহলের বিষয়। আর একটা কথা অনেকেরই মনে একটা প্রার্থনা থাকে যেটা সামনে প্রকাশ করলে লোকে তো বিরক্তবোধ করবেই, তার সাথে সাথে বক্তার মাথায় কিঞ্চিৎ ছিটগ্রস্ত আছে বলে মনে মনে ঠাউরে নেবে। আসলে ব্যাপারটা কি রেলপাগলরা সাধারণত ট্রেনেই ভ্রমন করি। কিন্তু কদাচিৎ যেখানে গন্তব্যস্থল সেখানে যাওয়ার মাধ্যম হিসেবে ট্রেন পাওয়া না গেলে সেখানে বাস কিংবা অন্য কোন যানবাহন ছাড়া গতি নেই। বিষন্ন মন নিয়ে তো উঠলাম বাসে, ওঠার পরই মনে মনে আকুল প্রাথর্না যেন একটা রেলগেট এর দেখা পাই। মনে মনে তখন একটাই প্রাথর্না রেলগেট যেন বন্ধ থাকে !
আনন্দের মাত্রা শতগুন হয় যখন রোড সিগনাল লাল আর ট্রেন সিগনাল সবুজ। বাসওয়ালাদের মুখ তখন ঠিক আমাদের বাংলার পাঁচ কিন্তু কিছু করার নেই রাজার পথেই রাজা এগোবে। মুগ্ধতার মাত্রা তখন আরো বেড়ে যায় যখন দেখি কোনো এক বাবা-মা তার সন্তান কে বলেছে,"বাবু দেখো দেখো ট্রেন যাচ্ছে।" এই আনন্দ যে কি তা একমাত্র রেলপাগলরাই বুঝবে। বললে হয়তো বিশ্বাস করবে না ঠিক এই অংশটুকু লেখার সময় চোখ ছলছল করছিল এক বিজাতীয় আনন্দে যেটাকে বলা হয় আনন্দাশ্রু। দু পাশে কত রথী-মহারথীর বাহন অপেক্ষায় কখন রাজা আসবেন। অবশেষে নিজের গর্জনে ১-২-৩ গতিবেগে এগিয়ে এলেন রাজা।
তাছাড়া, আমাদের সবার এমন কিছু বন্ধু থাকে যারা আমাদের মোবাইল একটু কোথাও রাখলেই ঘাঁটাঘাঁটি করে। কিন্তু আমার বন্ধুরা তো আমার মোবাইলে ঘটলে বরং বিরক্তিবোধ করে কারণ মোবাইল জুড়েই শুধু রেল এর ছবি আর ফেসবুক সহ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে শুধু রেল এর ছবি, ভিডিও প্লেয়ার এ ও রেল এর ভিডিও। তাই আমার মোবাইল সুন্দর ফিচারের (MI MAX) স্মার্টফোন হলেও তাদের কাছে এটা একটি "কিপ্যাড ফোনের সমতুল্য।"
আমার আর এক স্বভাব রেলফ্যান ছাড়া অন্য কোনো বন্ধুরা কোথাও বাই ট্রেনে গেলেই প্রথমেই আমার প্রশ্ন, "কোন ইঞ্জিন দিয়েছিলো ?" আমার এটা খেয়ালই নেই যে তারা কি করে এটা জানবে। কিছু উত্তর পাই যে লাল ইঞ্জিন না সাদা ইঞ্জিন বা কিছু উত্তর পাই জানি না। সবচেয়ে বেশি পাই এই উত্তর যেটা হলো, "আমি ঘুরতে গেছি আমি কি ইঞ্জিন দেখতে গেছি নাকি।"
রেল সূত্রে আমি শুধু নিজের দেশেই নয়, প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশেও অনেকে দাদা কিংবা ভাই এর সাথে পরিচয় হয়েছে। জেনেছি তাদের রেলওয়ে সম্পর্কে।জড়িয়ে গেছি তাদের রেলওয়ের বিষয়ে। এই ভালোবাসার বন্ধনের নামই সেই রেলওয়ে। যাদের নাম না করলেই নয়। আরো বেশি অবাক হই যখন দেখি আমার এসব দাদা-ভাই রেলপাগলদের অন্য কোনো কাজে সময় না থাকলেও ট্রেন দেখার সময় ঠিক আছে। নতুন কি ট্রেন উদ্বোধন হবে, কোন ট্রেন কি কোচ পাবে,কোন ইঞ্জিন আজ কার সাথে সবই তাদের নখদর্পনে। আমি নিজে বড়াই করি না তবে আমি হলফ করে বলতে পারি, আমাদের মধ্যে কিছু রেলপাগল আছে তারা যা জানে অনেক আচ্ছা আচ্ছা রেলকর্মীরাও তাদের জানার ধারেকাছে দিয়ে যাবে না।
কখনো কখনো 'আমাদের' সাধারণ মানুষ, রেল কর্মচারী কিংবা নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হেনস্থা হতে হয় কিন্তু তাতে যদি আমাদের একটুও দমানো যায়। ব্যতিক্রম ও আছে যেমন, অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই সেইসব রেল কর্মচারীদের যারা রেলপাগলদের অনুভূতি গুলো বোঝে।
........সমাপ্ত
"একজন রেলপ্রেমীর কথা" গল্পটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা কিন্তু আমাকে জানাতে ভুলবেন না। আপনি আরো গল্প পড়তে আমাকে অনুসরণ করতে পারেন। গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মেহেদী হাসান পিয়াস
©
"একজন রেলপ্রেমীর কথা" গল্পটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা কিন্তু আমাকে জানাতে ভুলবেন না। আপনি আরো গল্প পড়তে আমাকে অনুসরণ করতে পারেন। গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মেহেদী হাসান পিয়াস
©
খুব ভাল।
ReplyDelete