রং নম্বর

রং নম্বর - Green Vivacity

    ফোনটা রিং হতে হতে এক সময় কেটে গেল। জানি ধরবে না তাও শেষ বারের মত রিডায়াল করলাম শ্রুতিকে । শ্রুতি নামটা শোনার সাথে সাথে আমার রক্ত বিন্দুগুলো যেন আলোর গতিবেগে ধাবিত হয়। নামটা এই চার বছরে আমার জীবনের সাথে ওতপ্রত জড়িয়ে গেছে,কত রঙিন স্বপ্ন দেখেছি তাকে নিয়ে কখনো দার্জিলিং কখনোবা পুরী। না আমার চাহিদা কোনোদিনই বেশি ছিল না,ছোটো থেকেই ইচ্ছা ছিল একটা ভলো কলেজে ভর্তি হওয়ার তাই রেজাল্টর পর বাড়ির পাশের কলেজে এ চান্স পেলাম তখন আমি পৌছে গিয়েছিলাম সব পেয়েছির দেশে।কলেজের প্রথম দিন দুরু দুরু বুকে যখন ক্লাস রুমে বসে আছি, আমার একঘেয়ে জীবনের দরজা দিয়ে একগুচ্ছ গোলাপের সুগন্ধি সৌরভ ছড়িয়ে সে প্রবেশ করল। জীবনে প্রথম বারের জন্য আমি উপলব্ধি করলাম লাভ অ্যাট ফাস্ট সাইট।লাল চুড়িদার সাথে ম্যাচিং ইয়ার রিং পরিপাটি করে আচড়ানো চুল তাকে যেন কোনো স্বর্গের অস্পরা মনে হচ্ছিল।আমি নিস্পলক দৃষ্টে চেয়ে আছি তার দিকে। সম্বিত ফিরল যখনরোল কল আরম্ভ হল, আমার বুকে দামামা বেজে চলেছে কি হতে পারে আমার স্বপ্নলোকবাসিনীর নাম,সেই প্রথম শুনলাম নামটা শ্রুতি।প্রতিদিন আমি সকাল সকাল কলেজ পৌছে যেতাম ভাবতাম,আমার ইস্কুল জীবনের ফেলে আমা ব্যার্থ প্রেম হয়ত এবার পূরন হবে।ধীরে ধীরে পরিচয় হল আমাদের, ফোন নম্বর একচেঞ্ঝ হল,কথা হতে থাকল কলেজের বাইরে টিউশানে রাতে মোবাইলে।আমি ধীরে ধীরে ওর কাছের বন্ধু হয়ে উঠতে চাইছিলাম কিন্তু সেটাই হয়ত ছিল আমার জীবনের মস্ত বড় ভুল।আমি ওকে বুঝতে পারিনি!!!!!

প্রথম এক বছরের মধ্যে ওর দু দুটো বয়ফ্রেন্ড হয়ে গিয়েছিল, আমি ওর প্রতি আমার প্রেম ভালোবাসা সব আমার মনের গভীরে তালা বণ্ধ করে রেখে দিয়েছিলাম।দিন যায় রাত আসে বুকের মাঝে আগুন ঝরে পড়ে,ও আমায় মাঝে মাঝে নিজের বিভিন্ন ঘটনা বহুল দিনের কথা বলত আসলে ওর কাছে আমি ছিলাম নির্বাক শ্রোতা। আমি তো ওকে আমার মনের মাধুরী মিশিয়ে আমার স্বপ্নের রানি করে তুলতে চেয়েছিলাম, লাল পেড়ে শাড়ি, স্লিভলেস ব্লাউজ, হালকা লিবিস্টিক, ছোট্টো একটা টিপ, সদ্য স্নান করে আসা এলো চুল,বিন্দু বিন্দু জলে ভেজা পিঠ সাথে মুখে দুস্ট হাসি যা আমাকে সারাদিনের ক্লান্তি থেকে এনে ফেলত টগবগে যৌবনের ফল্গুধারায়।কিন্তু সে ছিল আপন মর্জির গোলাম রং লাগানো চুলে,পকেটে সিগারেট অ্যালকোহল আর লেট নাইট পার্টির নিত্য হাজিরি।তার চলন আমার স্বপন বড়ই বেমানান।আমি নিম্ন মধ্যবিও সে বড় লোকের বিটি,আমার পকেট মানি ১০০০ তার জিনস ৫০০০,আমাদের সপ্তাহে একদিন মাংস ২দিন মাছ তার রোজ রেস্টুরেন্ট।তবুওবলব কি বলব না ভেবে ভেবে মরি করে বলেই ফেললাম তাকে মনের কথা শুনে সেকি হাসি তার বলল বুঝতেই পারি নি আমার বন্ধু শুভ কত বড় হয়ে গেছে।হায়রে হতভাগা তোর স্বপন করে পরিহাস, জানলি না তুই এজীবনে স্বপ্ন দেখা যত সহজ পূরন করা ততই কঠিন।কত চেস্টা করেছি ওকে এড়িয়ে যেতে পারি নি, ফোন থেকে মুছে ফেলেছি মন থেকে পারি নি,বন্ধুদের টিটকারি শুনেছি জবাব দিতি পারি নি ভেবেছি এবার হয়ত সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু হয়নি।ভেঙে যওয়া হৃদয়ের বেদনা চিনতে শিখেছি,আজ আমাদের কলেজের ফেয়ারওয়েল জানি আজকের পর হয়ত কোনদিন ওর সাথে দেখা হবে না।চার বছর আগে এমনের সেলফোন যে রং নম্বর টা ডায়াল করেছিল শত চেস্টাতেও যে নম্বর আমি ঠিক করতে পারি নি সেই নম্বর থেকে কানে ভেসে আসছে একটাই আওয়াজ, ফোন সুইজ অফ আছে !"

এ বুকে বড় ব্যাথা, হাটছি একাএকা। এ মনের মরমে শুধুই বেদনা, কবে পূরন হবে মনোবাসনা।


● "রং নম্বর" গল্পটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা কিন্তু আমাকে জানাতে ভুলবেন না । আপনি আরো গল্প পড়তে আমাকে অনুসরণ করতে পারেন। গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।


মেহেদী হাসান পিয়াস


No comments

Powered by Blogger.