পরিচয়

পরিচয় - Green Vivacity

     সুরেশ ... তুই কালকেও এলি না । আমি তোকে কতো করে বললাম সেদিন । তুই তো কথা দিয়েছিলি কাজের ফাঁকে সময় করে একবার আসবি ।বলেছিলি বিয়েতে না হোক, ফুলশয্যার দিন তো যাবই যাব । আমি জানতাম তুই আসবি না । যে সিঁথিকে তুই নিজে হাতে রাঙিয়ে দিতে চেয়েছিলি , সেখানে অন্যের আঁকা শিল্পকর্ম তুই কি আর সহ্য করতে পারতিস ।

কিন্তু আমি তো চেয়েছিলাম রে , শেষবারের মতো অন্য কারোর হাতে নিজের আত্মসম্মানকে বিলিয়ে দেওয়ার আগে তোর মুখটা একটিবারের জন্য দেখতে চেয়েছিলাম । এই হাতে শেষবারের মতো তোর স্পর্শ পেতে চেয়েছিলাম রে । সেদিনের হাজার হাজার লোকের সামনে মেকি হাসির মধ্যে প্রতিটি মুহূর্তে খুঁজে চলেছিলাম তোকে । আমি পড়েছিলাম নীল রঙের কাঞ্জিভরম । জানি তো, নীল রং তোর একেবারেই সহ্য হয় না । আরে পাগল ওই জন্যই তো পড়েছিলাম যাতে আমার উপর জমাটবাধা তোর রাগটা আরও বেড়ে ওঠে। আমার বরের প্রিয় কিনা... কে জানে ? ওর সাথে তো তেমন কথাই হয়নি কোনোদিন । ভেবেছিলাম রাত্রে কিছু আলাপ পরিচয় করে নেব।

কিন্তু আমি তো ভুলেগেছিলাম , এতো কোনো সাধারণ রাত নয় – এতো আমার ফুলশয্যার রাত । এ রাতে পুরুষতো নারীর সুখের খবর নিতে আসে না ... সে তো নারীর রুপের প্লাবনে ভাসে না ।তবুও আমি দেবাশীষকে সাহস করে বললাম – আমরা যদি একটু নিজেদের জেনে নেই তাহলে কি আপনার অসুবিধা হবে ? তখন তো বুঝতে পারিনি আমার সামনে তো কোনো মানুষ দাঁড়িয়ে নেই , দাঁড়িয়ে আছে এক ক্ষুধার্ত সিংহ । যার লোলুপ্ত জিভ থেকে ভেসে আসছে হুইস্কির নির্যাস । তার চোখের শাণিত দৃষ্টির দর্পণে নিজেকে এক অসহায় ভেড়া ছাড়া আর কিছুই মনে হল না । আমার কথা শেষ করার আগেই আমাকে যেন চিরকালের মতো শিকলের জালে বেঁধে দিল তার বলিষ্ঠ ঠোঁটদ্বয় । বুকের আঁচল সরিয়ে যেন একদল অশ্বমেধের ঘোড়া দাপিয়ে বেড়ালো আমার নরম শরীরের প্রতিটি ভাঁজে। নিরুপায় ছাগলের উপর ধ্বংসলীলা চালানো বন্য কোনো দানবকে কি কখনো বাগে আনা যায় ? তাই আমিও আর ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাইনি রে । মাঝে একবার ওখানে তোর মুখটা কল্পনা করার ইচ্ছা জেগেছিল মনে , কিন্তু যে শরীর আমি দেবতাজ্ঞানে মেনে এসেছিলাম, তাকে এই দনবীয় রূপে আমি ভাবতে পারিনি রে ।

যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠছিল আমার শরীর , মনে হচ্ছিল ছুটে পালিয়ে যাই কোনো দূর সাগরে ... যেখানে শুধু শান্তি ... যেখানে আমি একা অনুভব করব বাতাসের নির্মল ডাক ... যেখানে কেউ থাকবে না ... গাছপালা , মানুষ , পশু,পাখি কেউ না , কেউ না ... কিন্তু তা বললে চলবে কি করে ? আমি তো মেয়ে হয়ে জন্মেছি আমাকে তো আজ স্বামীর বিছানায় নিজের সতীত্বের প্রমাণ দিতে হবে । সারা শরীরে যেন কেউ আচমকা বিঁধিয়ে দিল বাবলাকাঁটার হাজার হাজার ধারালো তরবারি । এমন করতে করতে কখন যেন ঘুমিয়ে গেছিলাম ।

সকালে উঠে দেখি আমার রক্তাক্ত শরীরের পাশে উপর পড়ে এক বিকট সুরে নাক ডাকছে রাত্রের সেই তাণ্ডবচালানো সিংহ । আমার বাঁহাতের চুড়িটা দেখি ভেঙ্গে গিয়ে আমার হাতে এখনও আটকে রয়েছে , আস্তে আস্তে কোনোমতে গায়ে একটা কিছু দিয়ে বাথরুমে গেলাম স্নান সেরে রেডি হতে । না রে এক ফোঁটাও চোখের জল ফেলিনি । কার জন্য ফেলবো ? আমার জন্য ? ধুসঃ আমি মেনেই নিয়েছি এতো আমার ভবিতব্য , রোজ রাতেই এমন হবে...এ তো জানা কথা ... বেকার বেকার অশ্রুমোচন করে কি লাভ ? আজ আর কিছু লিখবো না রে ।

কাল যদি সময় পাই তাহলে কাল কথা হবে তোর সাথে । জানি এইসব লিখলাম বলে হয়তো তোর রাগ হবে কিন্তু কি করি বল আমার তো আর নিজের বলতে কেউ নেই- যার কাছে আমার সবকিছু নিশ্চিন্তে বলতে পারব । আর প্লিস দয়া করে এ বাড়ির দিকে একদম আসিস না । আমি যেমন আছি তেমনই থাকতে দে । ভালো থাকিস ... ইতি তোর সংযুক্তা ।


● "পরিচয়" গল্পটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা কিন্তু আমাকে জানাতে ভুলবেন না । আপনি আরো গল্প পড়তে আমাকে অনুসরণ করতে পারেন। গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।


মেহেদী হাসান পিয়াস

No comments

Powered by Blogger.