লক্ষ্মীর অন্য পাঁচালী
![]() |
লক্ষ্মীর অন্য পাঁচালী - Green Vivacity |
ধর্মীয় ভক্তিভাব সহকারে পড়িবেন না, আঘাত পাইবেন
আজ সকাল থেকেই কৈলাসে কান পাতা দায়। বিষ্ণুর সাঙ্ঘাতিক প্রেসার হাই, কারণ তাঁর স্ত্রীকে মর্ত্যে যথেচ্ছ এক্সপোজ করা হয়েছে। কাল সারাদিন ফেসবুকে তার স্ত্রীর যথেচ্ছ ফটো পোস্ট করে করে চূড়ান্তভাবে তাঁকে এক্সপোজ করা হয়েছে... এই হল বিষ্ণুর বক্তব্য। আর রাগের মাত্রা আরও বেড়েছে কেননা এতে লক্ষ্মীর নাকি বিন্দুমাত্র বিরোধিতা ছিল না। তিনিও নাকি পাউট করে নানা অঙ্গ ভঙ্গী করে পোজ দিয়েছেন। বিষ্ণু সাত সকালেই এতো গলাবাজি করেছেন যে মর্ত্যে নাকি তাই মেঘলা আকাশ আর লক্ষ্মীও সময়ের আগেই ঘুম থেকে জেগে গিয়ে একেবারে পুরো কেস কেলো। মহাদেবের কানেও গেছে বিষ্ণুর তড়ং ভড়ং কিন্তু তিনি যথারীতি এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে সব বের করে সাত সকালেই গাঁজার আড্ডার দিকে রওনা দিয়েছেন। আর ভাল লাগেনা তাঁর এই সাংসারিক ক্যাচাল। জীবনটা একেবারে ডায়াবেটিস বানিয়ে ছেড়ে দিল এই মা বেটীরা মিলে। আশ্বিণ এলেই মাথাটা চটকে যায় এদের বেয়াদপি দেখলে।
লক্ষ্মী সেই ভোরে আলো ফোটার আগেই জেগে গিয়ে মেজাজ গরম। একে রাত দুপুরে ঘুমাতে হয়েছে, তার ওপর যদি এই সাত সকালে ভ্যানতারা শুনতে হয় কাহাতক আর পারা যায়! মাও আজকাল পুরো রুটিন চেঞ্জ করে ফেলেছে। এই থিমের বাড়াবাড়ির জেরে মহালয়া গেল কি গেলো না ব্যস তিনি বাপের বাড়ি এসে উপস্থিত। কোথাও লঙ্কার কস্টিউম, কোথাও দেশলাই কাঠি, কোথাও নারকেলের ছোবড়া আরে একটা লিমিট আছে তো নাকি রে বাবা! কি গা কুটকুট, কি গা কুটকুট, উফ্। আদিখ্যেতার একশেষ, কথা নেই বার্তা নেই দিলো ক’লাখ টাকার গয়না পরিয়ে। তাতে বাপু কি হল... বিজ্ঞাপন হল তোর দোকানের, ক্লাবের হ্যাংলাপনা দেখানো হল আর মাথামোটা পাব্লিক ঘেমে নেয়ে হুমড়ি খেয়ে এসে পড়লো আমাদের গায়ের ওপর। উফ্, সে কি গায়ে গন্ধ... ছ্যা ছ্যা। ও কদিন একটু শান্তিতে খেতে ঘুমুতে পর্যন্ত দিলে না... আহাম্মকের দল!
গতকাল কি আর এক্সপোজ হলাম, সাত সকালে চেঁচামেচি করে মাথাটা ধরিয়ে দিলে এই বিশু... এমনিতেই যবে থেকে এই থিমের বাড়াবাড়ি তবে থেকেই মাইগ্রেনটা শুরু হয়েছে। সকালে একটু দেরী করে ঘুম থেকে না উঠলে জানে যে আমার সারাদিন গা ম্যাজম্যাজ করে তবু বিশুর এই মিডিল ক্লাস মেন্টালিটির মতো সকালে উঠেই ঘ্যানঘ্যানানি বন্ধ হয় না! সো ডাউন মার্কেট!! সাধে কি আমার আর চোখের নীচে এই ডার্কসার্কেল পড়ছে? কাল কত রাতে ইনো খেয়ে তারপর একটু চোখ বুজলাম, তাও কি শোবার জো আছে? আবার পিরিত করে সাথে পুদিনহারা দিয়ে দিয়েছিল বিশু...“নিয়ে নাও সাথে, তোমার দরকার পড়বে” ... যত্তসব আদিখ্যেতা, প্রেম আর ধরে না! তা বাপু আমি কি করবো তোমার সিক্স প্যাকওয়ালা বডি দেখানোর চান্স যদি তুমি না পাও তো কি সেটা আমার দোষ? তোমার ইচ্ছে কালো পাথরে ঢেপলা হয়ে বসে আগে তোমার পুজো করতে হবে তারপর দুনিয়ার বাকি পুজো হবে। তা নাও বাপু তাই সই, এখন যেই বাকিদের ছবি ফেসবুকে দেখেছো তো তোমার পিত্তি জ্বলছে... “হ্যাঁ , কালো একটা পাথরে ঢেকে আমায় গন্ধওয়ালা গঙ্গাজল, ফার্টিলাইজার দেওয়া ফুল আর ছাতা মাথা পোকায় কাটা তুলসি আর দুব্বো দিয়ে কাম সেরেছে, কী সুরসুরি, কী সুরসুরি ঐ দুব্বোর ডগা লেগে”...... আরে তাতে আমি কি করবো! দেখো না গনেশও কত স্মার্ট হয়ে গেছে......গনা দিব্যি দশদিন সালসা, গরবা, ঢিনচ্যাক করে পুরো দুনিয়া কাপাচ্ছে... মহারাষ্ট্র, গুজরাট, চেন্নাই ছেড়ে এখন অলিতে গলিতে এই মমর এলাকাতেও কেমন জমিয়ে বসেছে... কেতোটা তো চিরকালই শো অফ করতে ভালবাসে... এর ওর বাড়ি জুলুম করে ঠিক গিয়ে উপস্থিত হয়ে যায় আর তুমি? সেই বিশ্ব ক্যাবলাই রইলে... নাড়ু সেজে কেল্টু পাথর হয়ে পুরুতের থলেতেই রয়ে গেলে... আমায় দেখোতো... কি সুন্দর এবার গোল্ড ফেসিয়াল করালাম, হেয়ার স্পা, ফুল বডি ম্যাসাজ... কিছু বাদ দিই নি, ভাবছি নেক্সট ইয়ার চুলটা স্ট্রেটনিং করাবো... আর তুমি? সেই আদ্যিকালের ঐ ধুতি আর ল্যাদ খাওয়া পোজেই রয়ে গেলে... আরে একটু গ্রুমিং করতে পারো না নিজের? সকাল থেকে চেঁচামেচি করে সবার মাথা খাচ্ছো , কোন সফিস্টিকেসি নেই... এতো বছরেও তোমায় কিছু শেখাতে পারলাম না।
তুমি কি ভেবেছো কাল আমার পোর্টফোলিও বানিয়েছে? তোমার মাথা... আরে শুধু সেই সাত সকাল থেকে ন্যাকামি মেয়েগুলোর... উপোষ করেছি, শরীর ভাল না, তাও কত কিছু করলাম, আলপনা দিয়েছি... হ্যানা ত্যানা করে ভ্যানতারা মেরে ছবি পোস্টাচ্ছে... লাগাতে হয় দু গালে... কেন রে এই যে আমি কৈলাসে গিয়েই এতো কম সময়ের মধ্যে পুরো বডি স্পা, ফেসিয়াল, হেয়ার ট্রিটমেন্ট, ফ্রেঞ্চ ম্যানিকিউর, অক্সিব্লীচ উফ্ শেষ মুহূর্তে প্যাডিকিউর... তুমি তো জানো বিশু কিভাবে টাইম এডজাস্ট করতে হয়েছে আমাকে... তবু ফুল প্রিপারেশন নিয়ে ফিল্ডে নেমেছি... আর এই ৭০-৭২ কেজির কুমড়োপটাসগুলোকে দেখো ! শুধু খাচ্ছে আর ফুলছে... এখানে খেলাম... ওখানে খেলাম... এই খেলাম... সেই খেলাম... এই ছবি পোস্টাচ্ছে। বুদ্ধির ঘরেতো উইপোকা বাসা বেঁধেছে...। তুমি চিল্লিয়ে মরছো আমায় এক্সপোজ করেছে বলে, তুমি জানো ঠিকমতো ফ্রন্ট থেকেতো ছবিটা পর্যন্ত তোলে নি! ভাল করে দেখো আইশ্যাডোর কালার, লিপস্টিকের শেডটা পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে না...নাড়ু বানিয়েছি, মোয়া করেছি আরে সব ঢপের চপ... সব ঐ শ্রীকৃষ্ণ আর ভি আই পি সুইটস থেকে কেনা... চিঁড়ের মোয়া পাচ্ছিল না, তো ঐ পাড়ার দোকান থেকে এনে শেষে কাজ চালিয়েছে... দেখো না ভাল করে পাশে প্যাকেট পর্যন্ত পড়ে আছে কয়েকটা এখনও সেগুলোতে নাড়ু, মোয়া উঁকি মারছে... আর পোজ মেরে ছবি দিয়ে ক্যাপশন... সেই সকাল থেকে বসে নাড়ু আর মোয়া বানিয়েছি... ভোগের খিচুড়ি বানিয়েছে মিনতীর মা... ক্যাপশন দিল... আজ মাকে নিজের হাতে ভোগের সব উপকরণ সাজিয়ে দিতে ফিলিং ভেরি ফেস্টিভ... ঝেঁটা মার এমন ক্যাপশনে... বেচারা মিনতীর মা ছুটি নেবে বলেছিল, শেষ পর্যন্ত ধমক খেয়ে, কাজে এলো... এ মাসের মাইনেটা পর্যন্ত দেয় নি ওকে। বিশু তুমি কি ভেবেছো শুধু আমার ছবি তুলেছে... আরে কতবার মুখটা পাউট করলাম, ভাবলাম এবার বুঝি নেবে ছবি... আরে ধুর... বউ পাঁচালী পড়ছে তার ছবি, বউ গয়না পরছে তার ছবি, পাশের বাড়ির কোন কাকিমা আলপনা দিয়ে গেলো নিজে পোজ মেরে ধ্যাপ করে বসে ছবি তুলে ক্যাপশন “আজ আমার আঙ্গিনায় মায়ের আবাহন”... ন্যাকামির শেষ আছে?
তুমি এতো চেঁচিয়ে আর বিপি হাই করো না, আজই ফিরছি। আমিও ভাবছি একটা অ্যাকাউন্ট খুলবো এবার এফবিতে... মর্ত্যে যাওয়ার আগে এক ডজন ছবি পোস্টাবো... ফিলিং হ্যাপি... গেটিং প্রিপেয়ার্ড... তারপর বিউটি পার্লারের ছবি... আসার আগেই বেশ কয়েকটা ছবি আপলোড করে দেবো... উফ্ দু’দিন বাজারে ভর দুপুরে রোদে দাঁড় করিয়ে রেখেছে গো, পুরো ট্যান পড়ে গেছে... সান্সক্রিনেও কিসসু কাজ দেয় নি... গিয়ে স্ক্রিন ট্রিটমেন্ট করাতে হবে... বিশু আমার একটা অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নিয়ে রেখো তো... আর এসব খাবার মুখে রোচে না... আজকাল ঘরের ফিলিংটাই চলে গেছে... শুধু বাজারী মালে কাজ সারে... বিশু আজ হালকা করে আমার জন্য একটু কাটা পোনার ঝোল আর শুক্ত রেঁধে রেখো আর কিছু খাবো না আজ। তুমি দুটোই বেশ ভাল রাঁধো কিন্তু। ডার্লিং , আমি আজই ফিরছি, প্লিজ আর চেঁচিও না, একটু গড়াতে দাও... আবার এই আপদগুলো উঠলেই দধিকর্মা, হ্যানাতেনার ছবি পোস্টাবে... আমার এই বাসি মেকাপের ছবি আর কোথায় তুলবে... কালই তোলে নি তো আজ... ডার্লিং আমায় একটু ল্যাদ খেতে দাও... তুমি লাঞ্চ রেডি কর আমি দুপুরের ফ্লাইটেই ফিরছি...লাভ ইউ... মিস ইউ জানু... বিলিভ মি... আজই অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করে ফার্স্ট ফটোটা আমার এই ফিলিং-টারই থাকবে দেখে নিও... তারপর তোমারও একটা অ্যাকাউন্ট বানিয়ে দেবো... তুমি সলমান আর রনবীরকে ফলো করে নিজের অ্যাকাউন্টটা আপডেট করতে থাকবে... যাকে তাকে আবার ফলো কর না... যা গাইয়া চয়েস তোমার... এখন আর ডিস্টার্ব কর না... গুড নাইট... ওহ্, সকাল হয়ে গেছে তো... নাও গুড মর্নিং... কামিং সুন... বাই......
● "লক্ষ্মীর অন্য পাঁচালী" গল্পটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা কিন্তু আমাকে জানাতে ভুলবেন না । আপনি আরো গল্প পড়তে আমাকে অনুসরণ করতে পারেন। গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।
মেহেদী হাসান পিয়াস
No comments