ভূতকে দেখানো ভয়

ভূতকে দেখানো ভয় - Green Vivacity

     অনেক হল সাসপেন্স, এবার একটু দাঁত বার করে হাসুন তো সকলে !

    প্যালার ওপর সত্যিই খুব রাগ হচ্ছে আমার আজ। ও ভালো করেই জানে, যে ল.সা.গু, গ.সা.গু আর ঐকিক নিয়মের অঙ্কগুলো খুব একটা ভালো করে আসে না আমার। কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হত, যদি সে অঙ্ক স্যারের টিউশনের পরীক্ষায় ওই অঙ্কগুলোকে একবার দেখাতো আজ আমায়? আমার পাশেই তো বসেছিলো সে আজ, তবুও খাতাটা এমন ভাবে লুকিয়ে ধরে লিখছিল, যে না জানি কোন যখের ধন খুঁজে পাওয়ার ম্যাপ আঁকছে তার পাতায়!…… আবার পরীক্ষায় ফেল করবো, আবার স্যার গার্জেন কল করবেন, আবার বাবার কাছে কান মলা খাওয়া!…….নাহ, এবার প্রতিশোধ নিতেই হবে প্যালার ওপর!

আমি জানি আজ স্কুল ছুটির পর প্যালা ইংরাজি পড়তে যাবে, তারপর রাত দশটা নাগাদ সে গ্রামের দীঘির পারে ওই সরু রাস্তাটা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরবে! দাঁড়া, এবার দেখাচ্ছি তোর মজা!…….পরিকল্পনা মত ঠিক সময়ে সেই জনমানবশূন্য সরু রাস্তায় পৌঁছে গিয়েছিলাম আমি…..দেখলাম যে, দীঘির পার দিয়ে একা একা পিঠে ব্যাগ নিয়ে হেঁটে হেঁটে বাড়ির ফিরছে প্যালা! ওর সাইকেল কোথায় গেল? কে জানে, হয়তো সারাতে দিয়ে এসেছে, মাঝে মাঝেই তো খারাপ হয় ওর সাইকেলটা…..যাইহোক, আমার তা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। আমি বাড়ি থেকে চুরি করে নিয়ে আসা বাবার দামি সাদা ধুতিটা গায়ের ওপর চড়িয়ে, মুখ ঢেকে, হঠাৎ এসে দাঁড়িয়ে পড়লাম ওর সামনে! সাথে সাথে ধুতির নিচে লুকিয়ে ধরে রাখা মোবাইল ফোনে জোরে করে চালিয়ে দিলাম বিক্রম ভাটের একটি ভৌতিক হিন্দি ছবি থেকে রেকর্ড করা ভূতের চিৎকারের আওয়াজ!……ব্যাস, আর যাবে কোথায় বাছাধন! আমাকে দেখে ভূত ভেবে, চমকে উঠে উল্টো রাস্তায় দে দৌড়……..হা হা হা হা!

প্যালাকে ভয় দেখাতে পেরে, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে দীঘির পার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম আমি…….হঠাৎ  একটু দূরে চোখ যেতেই বেশ অবাক লাগলো একটা দৃশ্য দেখে! এই সামনেই, দীঘির জলের ধারে কাদার মধ্যে পড়ে আছে প্যালার সাইকেলটা!…..কৌতূহলী হয়ে সেদিকে এগিয়ে যেতেই, আরেকটি দৃশ্য দেখে চক্ষুস্থির হয়ে গেল আমার! সেই রাতের অন্ধকারেই স্পষ্ট দেখলাম, যে সাইকেলটার অনতিদূরেই, দীঘির জলের মধ্যে ভেসে উঠছে প্যালার ফুলে ফেঁপে ওঠা জলে ডোবা মৃতদেহ! বোঝাই যাচ্ছে, যে কিছুক্ষন আগেই, দীঘির ধার দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যেতে যেতে, কোনো ভাবে ব্যালান্স হারিয়ে ফেলে জলে পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছে সে!…….ভয়ে আমার হা হয়ে যাওয়া মুখ বন্ধ হওয়ার নামই নেয় না!……তাহলে ওটা কে ছিল, যে আমাকে দেখে ভূত মনে করে ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল?……ওহ মাই গড, তাহলে কি প্যালার ভূতকে ভয় দেখালাম আমি!

(সমাপ্ত  - জলে ডুবে মৃত্যুর পর লাশ এত তাড়াতাড়ি ভেসে ওঠে না, এটা শুধু গল্পের খাতিরে বলা হয়েছে।)


● "ভূতকে দেখানো ভয়" গল্পটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা কিন্তু আমাকে জানাতে ভুলবেন না । আপনি আরো গল্প পড়তে আমাকে অনুসরণ করতে পারেন। গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।


মেহেদী হাসান পিয়াস

No comments

Powered by Blogger.