লুচি

লুচি - Green Vivacity


                 "শুনছো গিন্নি, আজ ছোলার ডালটাও রান্না কোরো...", সকালে চা খেতে খেতে সত্যবাবু স্ত্রীকে বলেন মনের কথাটা। রবিবারের জলখাবারে তাঁর লুচি চাই ই চাই। "আহ্ ! ফুলকো লুচি, বেগুনভাজা আর ছোলার ডাল.. রোব্বারের সকালটা জমে যাবে ! কি বলো ?"  সুড়ুৎ করে চায়ে চুমুক দিয়ে একবার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে নেন তিনি। সত্যবাবুর গিন্নি তখন ময়দা মাখতে মাখতে মিটিমিটি হাসছেন।

পঁয়ত্রিশ বছরের বিভাদেবীর বিবাহিত জীবনে এই একটি জিনিসেরই কোনো পরিবর্তন হয়নি। সত্যবাবুর বাজার করার অভ্যেস আর রবিবারের লুচির আবদার। প্রত্যেকদিন সকালেই বাজার করতে যান তিনি, কিন্তু রবিবার হলে একটু তাড়াতাড়ি চা খেয়েই বাজারের দিকে রওনা হন। দরদাম করে ভালো কাটা পোনা বা ইলিশ মাছ কিংবা খাসির মাংস বাজার করেন তিনি আর তারপর তাঁর ছোটবেলার বন্ধু রমেনবাবুর বাড়ি গিয়ে এক ঘন্টা আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফেরেন ১০ টার মধ্যে। সাথে থাকে রসগোল্লার হাঁড়ি। সত্যবাবু বলেন, "লুচির পর মিষ্টি আর রবিবারের দুপুরের চারপদ রান্না, এই না হলে বাঙালির চলে না ।"

ময়দা মাখতে মাখতে বিভাদেবী রবিবারের বাজারের ফর্দ সত্যবাবুকে মুখে মুখে বলতে থাকেন। "বিভু আজ ভালো ইলিশ মাছ পেলে আনব কিনে", পায়ে চটি গলাতে গলাতে সত্যবাবু স্ত্রীকে বলে গেট বন্ধ করে বেরিয়ে পড়েন বাজারের দিকে। সিঁড়ি দিয়ে নেমে রাস্তায় চায়ের দোকানের দিকে একবার আড়চোখে দেখে নেন তিনি। দোকানের সামনে তখন খবরের কাগজ হাতে জ্ঞানবাবুদের চায়ের জমাটি আড্ডায় দারুন তর্কবিতর্ক।

সত্যবাবু রিটায়ার্ড খবরের কাগজের কারখানার কর্মচারী। বাড়িতে তিনি আর তাঁর স্ত্রী, ছোট্ট সংসার। এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, ধানবাদে থাকে। স্ত্রীর ভালোই শক্ত-সামর্থ্য এখনো, তাই পয়সা খরচ করে আর কাজের লোক রাখা হয়নি। আগের রবিবার স্ত্রী বাপের বাড়ি গেছিলেন বলে লুচি টা আর খাওয়া হয়নি, তাই সকালে উঠে পাড়ার চায়ের দোকানে এসেছিলেন চা আর টোস্ট বিস্কুট খেতে। সেখানে তিনি দেখেন পাড়ার মাতব্বর জ্ঞানবাবু আর তাঁর মতনই ৪-৫ রিটায়ার্ড লোক একেবারে জমাটি আড্ডায় বসেছে। কি নেই সেই আড্ডায় ! রাজনীতি থেকে ভারতের মহাকাশযান, বিশাল সে আড্ডার বিষয়ের পরিধি। তবে সত্যবাবুর মোটেই ভালো লাগেনি এসব। এক তো জ্ঞানবাবুর উটকো জ্ঞান দেওয়ার অভ্যেস তার উপর যত সব বাইরের ফালতু কথা। আর এ বাপু, কলকাতার কত লোক ম্যালেরিয়ায় মরছে, কত বাচ্চা না খেয়ে আছে, সে সব এরা খোঁজ রাখে না আর দেশের খবর নিয়ে নাচানাচি ! খবরের কাগজের কারখানায় কাজ করার দরুন সত্যবাবুর রাজনীতির উপর বেশ ভালোমতোই জ্ঞান আছে কিন্তু ওই আড্ডায় তিনি আর নিজের জ্ঞান না বিলিয়ে চা টা কোনোরকমে খেয়ে সোজা চলে এসেছিলেন বাড়িতে। আর তারপর শপথ করেছিলেন জ্ঞানবাবুদের চা-এর আড্ডার সময় তিনি আর কখনো চা খেতে যাবেন না।

বাজার টা ভালোমতো করে নিয়ে মাঠের পাশের গলি দিয়ে হেঁটে আসছিলেন তিনি বন্ধু রমেনবাবুর বাড়ির দিকে। সকালে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে বলে পাশের বড়ো মাঠে জলকাদা জমে গেছে। তাই মাঠে ছেলেপুলে ফুটবল খেলতে আসেনি আর গলিতেও লোকজন তেমন নেই। পিছন থেকে হটাৎই "সত্যজেঠু" ডাক শুনে মাথা ঘোরালেন তিনি আর তারপর সব অন্ধকার...।

জ্ঞান ফিরতে সত্যবাবু আলতো করে চোখ খুললেন। একটা নির্মিতমান ঘরের মাঝখানে তিনি চেয়ার-এ বসে, চেয়ার-এর হাতলে তাঁর দুটো হাত শক্ত করে বাঁধা। ইট গাঁথা ঘরের এদিক ওদিক বাঁশ, প্লাস্টিক ইত্যাদি ছড়ানো, দূরে তাঁর বাজারের ব্যাগটা পড়ে আছে। ব্যাগ থেকে কচু শাকের মাথা আর শখ করে কেনা ইলিশ মাছটা আধখানা মাটিতে গড়াগড়ি যাচ্ছে। কিছু দূরে তিনি দেখেন দুটো কালো রোগা ছেলে বসে ফিসফিস করে কি গল্প করছে। সত্যবাবু চট করে হাতটা খোলার চেষ্টা করেন কিন্তু পারেন না। পা দুটোও দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা। ক্লোরোফর্মের ডোসে মাথাটা একটু ঝিমঝিম করে ওঠে তাঁর। সামলে নিয়ে সোজা হয়ে বসেন তিনি। "এই ছেলে তুম হামে এখানে কিউ নিয়ে আস্তা হ্যায় ?", জোরে বলে ওঠেন সত্যবাবু। ছেলেদুটো এতক্ষণ নিজেরা বসে গল্প করছিলো, সত্যবাবুর গলায় তারা তাঁর দিকে তাকিয়েই উঠে দৌড়ে আসে। ভয় পেয়ে যান তিনি, হাতে তো ছুরি-টুরি কিছু দেখছেন না ! তবে এখনই হয়তো মারবে না তাঁকে।

ছেলে দুটো কাছে এসেই বলে, "বমি বমি পাচ্ছে না তো আপনার জেঠু ?" বমি ! না তা তো পায়নি কিন্তু ভয়ে তাঁর একটু মুত্রাবেগ মতো পেয়েছে। সেটা উপেক্ষা করেই তিনি বলে ওঠেন, "তুম কৌন হোতা হ্যায় ? হামকো ছেড়ে দেতা হ্যায়, হামকো বাড়ি....।" "আজ্ঞে আমরা বাঙালি জেঠু.......!", তাঁকে মাঝপথে আটকেই একটা ছেলে বলে ওঠে। সত্যবাবু একটু শান্তি পান, যাকগে ! তবে এদের সাথে হিন্দি ছেড়ে বাংলায় কথা বলা যাবে। "বাঙালির ছেলে হয়ে ইলিশ মাছ মাটিতে ফেলে রেখেছিস ছোকরা !", আচমকা ধমকে ছেলেদুটো একটু থমকে যায়। তারপর একজন দৌড়ে গিয়ে তাঁর বাজারের ব্যাগ তুলে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়। "আপনার বমি পায়নি যখন তবে ভালো, ডোসটা তবে ঠিকই হয়েছে, বেশি পড়েনি... তা আপনি কি কিছু খাবেন জেঠু ?", লাল জামাপরা ছেলেটা জিজ্ঞেস করে সত্যবাবুকে।

এরকম কিডন্যাপিং এর কথা তিনি কোনোদিন শোনেননি। কিডন্যাপার তাঁর সব কথা শুনছে, তারপর আবার তিনি কি খাবেন জিজ্ঞেস করছে, তারপর তাঁকে "জেঠু" সম্বোধন ! চুপ করে তিনি এসব ভাবতে থাকেন আর তখনই ছাইরঙা জামাপরা ছেলেটা বলে, "আসলে ইস্পেশাল ইন্সট্রাকশান জেঠু, আপনি বড়োলোক কিনা, অনেক মালকড়ি পাওয়া যাবে। তাই আপনার কিডন্যাপিং এর সুপারি যিনি দিয়েছেন তিনি বলেছেন আপনার যত্নআত্তির যেন ত্রুটি না হয়..!"

"তাঁর কিডন্যাপিং এর সুপারি ! তিনি বড়োলোক ! নির্ঘাৎ এরা কোনো ভুল করছে। কিন্তু এখন একথা ফাঁস করলে তাঁর জলখাবারটা মিস হয়ে যেতে পারে !", এসব ভেবে তিনি বলেন, "বেশ খেতে যখন বলছিস তবে কটা ফুলকো লুচি, বেগুন ভাজা আর রসগোল্লা দিস না হয়।" ছেলেগুলো বোধহয় তৈরী ছিল, সঙ্গে সঙ্গে একজন একটা ফোন করে নম্বর ডায়াল করে কাকে যেন খাবারগুলো বানাতে বললো।

একঘণ্টার মধ্যে খাবার চলে এলো। ইতিমধ্যে খাওয়ার জন্য সত্যবাবুর হাতের বাঁধন খুলে দিয়েছে ওরা। আহা ! গরম গরম ফুলকো লুচি ! আনন্দে ডানহাতের তর্জনী দিয়ে একটা লুচির উপর তিনি টুক করে একটা ফুটো করে দেন তারপর আঙ্গুলটা একটু চেটে নেন। তারপর আধখানা লুচি কেটে বেগুনভাজায় এক পোঁচ দিয়েই মুখে পুরে নিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেন আমেজে। "এ স্বাদের ভাগ হবেনা...", মনে মনে ভাবতে ভাবতে চোখ খুলতেই দেখেন দূরে দুটো ছেলে বসে তাঁর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে দেখছে। চোখচুখি হতেই ছেলেদুটো চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়। "এহ্ ! দেখতে কি আমায় খুব হ্যাংলা লাগছে ?", ভেবে নিয়ে তিনি বলেন, "তা তোদের খাবার কোই ? নিয়ে এলি না যে !"

লালজামা ছেলেটা বলে, "এই যে জেঠু আমরা মুড়ি তরকারি খাবো।" "কেনো লুচি কি কম পড়ল নাকি রে ?", নিজের থালার দিকে একবার টুক করে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন তিনি। "নাহ আসলে নতুন তো আমরা, বাজেটও কম। আপনার ফেরতের টাকাটা পেলে একটু হাতে আসবে আর কি ! হে হে", লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বলে লালজামা ছেলেটা। এবার নিজের খারাপ লাগে সত্যবাবুর। এরা এরপর যদি জানতে পারে যে তিনি ঠিক লোকই নন যাকে ওরা কিডন্যাপ করেছে, তবে ওদের আরো ক্ষতি হবে। কিছুক্ষন ভেবে তিনি বলেন, "তোদের দলে কতজন আছে ?" হটাৎ এরকম প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় ছেলেগুলো, আমতা আমতা করে বলে, "আজ্ঞে জেঠু আমরা ২ জন।" "আর যে খাবার বানিয়ে দিল ?", জিজ্ঞেস কেন সত্যবাবু। "সে তো কৃষ্ণার মা, ও আমাদের দলে না। শুধু রান্না করে দেয়, রান্নার পয়সা দিয়ে দি ওকে।", ছাই রঙের জামাপরা ছেলেটা বলে। "বেশ তবে আমার থালায় ১১ টা লুচি আছে, আয় ৩ জন ভাগ করে খাই।", কথাটা বলে সত্যবাবুর মনে অদ্ভূত আনন্দ হয়। এই প্রথম লুচি ভাগ করে নিতে তাঁর বেশ ভালোই লাগে। ছেলেদুটো প্রথমে না-না বল্লেও তারপর নিয়ে নেয় ৩টে করে লুচি। 'যেন কতদিন পর পেয়েছে লুচির স্বাদ..', সেরকম ভাবেই লুচিগুলো টপাটপ দাঁতে ছিড়তে থাকে ছেলেদুটো। "আজ্ঞে রসগোল্লার বদলে ৪টে শুকনো সন্দেশ এনেছি জেঠু, কিছু মনে করবেন না প্লিজ...।", সত্যবাবুকে মাথা নিচু করে বলে ছাইজামা ছেলেটা, "আসলে বাজেট...।" সত্যবাবু কিচ্ছু মনে করেন না। ছেলেদুটোর শুকনো মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে ভারী মায়া হয় তাঁর।

"জেঠু দুপুরের খাবারের মেনুটা যদি বলে দেন.. কৃষ্ণার মা তাড়া দিচ্ছে", একটা ছেলে বলে সত্যবাবুকে। "আমার বাজারের থলিতে দেখ তো কচুশাক, ইলিশ মাছ আর কটা টমেটো আছে। এটা নিয়ে গিয়ে কৃষ্ণার মা কে দিয়ে বল কচুশাক আর ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে ঘন্ট, ইলিশ মাছের সর্ষেবাটা আর টমেটোর চাটনি করতে। আমার ব্যাগটা সাবধানে নিয়ে যাবি।", বলেন সত্যবাবু। একটু আগে জলখাবার খাওয়ার পর এরা আবার তাঁর হাত বেঁধে দিয়েছে, একবার বাথরুম এও যেতে দিয়েছে যদিও। গল্প করতে করতে জেনেছেন ছেলেদুটো ১২ পাস। চাকরির অভাবে এই পেশায় আসা। এর আগে মোটে ২ বার কিডন্যাপ করেছে, তাঁর বারেরটা নিয়ে ৩ বার। তাঁর কিডন্যাপিং এর টাকা তো এরা পাবে না। এখনো পর্যন্ত ভালো উপার্জনও হয়নি, তাঁরটা থেকে কিছু আশা ছিল কিন্তু সে গুড়ে বালি। গিন্নি ভয় পেয়ে যদি টাকা দেবেও বলেন তবে ১ লাখ এর বেশি আর দিতেও পারবেন না। গিন্নির কাছে এতটাই জমানো আছে। ছেলেগুলো কিন্তু বেশ ভাল, তাঁকে যে মেরে ফেলার মতো পাকা হাত হয়নি ওদের, তা তিনি ভালোই বুঝেছেন কথা বলে।

দুপুরের খাওয়াটা বেশ ভালোই হল। তিনি যা বাজার করেছিলেন তাতে তাঁর নিজের আর ২ টো ছেলের ভালোমতো খাওয়া হয়ে গেছে। খাওয়ার পর লালজামা ছেলেটা এসে সত্যবাবুর হাতে একটা জলের বোতল দিয়ে বলে, "জেঠু বাড়িতে একটু ফোন করে দিন না। জেঠিমাকে বলবেন ৬০ লাখ হলেই হবে।" "৬০ লাখ !" বিষয় খেয়ে সত্যবাবু একটু সোজা হয়ে বসেন। তারপর শান্ত গলায় বলেন, "দেখ ছোকরা, আমার কাছে তো এতো টাকা নেই। আমি সাধারণ খবরের কাগজের কারখানার রিটায়ার্ড কর্মচারী। তোরা আমায় ভুল করে তুলে এনেছিস।" একটু থেমে আবার বলেন তিনি, "আমার সম্বল বলতে বাড়ির আলমারিতে কিছু টাকা আছে, ৫০ হাজারের মতো। থাকি ভাড়া বাড়িতে। আমি সেই লোক নোই রে...।" "তবে এতক্ষন কিছু বলেন নি কেন ? দিব্বি খাওয়া দাওয়া করলেন ! নিশ্চই আগেই আপনি বুঝেছিলেন।", রাগ মাখানো কাতর গলায় বলে ওঠে লালজামাপরা ছেলেটা। আর একটি ছেলে ততক্ষনে ফোন লাগিয়ে কিছু বোধহয় জানতে চায় সুপারি দেওয়া লোকটার কাছে। একটু হুঁ-হাঁ করে ফোন কেটে দিয়ে তাঁকে এসে বলে, "আপনার নাম সত্যপ্রকাশ মজুমদার নয় ?" "আমার নাম "না না, সত্যপ্রকাশ নস্কর যে !", ধরা গলায় বলে ওঠেন সত্যবাবু। "গুলিয়েছে রে, এবার কি হবে ?", মাথায় হাত ঠুকে লাল জামাপরা ছেলেটা জিজ্ঞেস করে অন্য ছেলেটাকে। "বস কি বললো ?", তারপর জিজ্ঞেস করে লালজামা। "বস বলছে পার্টি সন্ধেবেলায় বাড়ি থেকে হেঁটে বেরোবে রাসমনি রোডের দিকে, তখনই কিডন্যাপটা..", বলে ছাইজামা।

"এই জেঠুকে তবে কি করা যায় ? আমাদের ব্যাপারে সব যে জেনে গেছে... ", "কিন্তু লোকটা ভালো মনে হল, ডিল করে ছেড়ে দিলে হয় না ?".. "কিন্তু যদি থানা-পুলিশ..", ২টো ছেলে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে। এতক্ষণে সত্যবাবু সব শুনে আস্তে করে বলেন, "দেখ বাবা ! আমরা গরিব বাড়ির লোক। আমাদের কি আর পুলিশ-টুলিশ পোষায় ! আমায় ছেড়ে দিলে আমি কাউকে কিচ্ছুটি বলবো না, মা কালির দিব্যি..।"

একটু অন্ধকার হতেই ছেলেদুটো সত্যবাবুকে তাঁর বাড়ির রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে যায়। আসার আগে তিনি নিজের মানিব্যাগ থেকে ৩০০ টা টাকা বের করে তাদের হাতে ধরিয়ে দেন। ছেলেদুটো তাঁকে একবার প্রণাম করে বলে "জেঠু কাউকে কিছু বলবেন না প্লিজ !" সত্যবাবু কথা দেন তিনি কাউকে কিছু বলবেন না, নিজের বাজারের ব্যাগটা হাতে কিছুদূর হেঁটে এসে বাড়ির দরজায় কড়া নাড়েন। গিন্নি দরজা খুলেই জিজ্ঞেস করেন কোথায় তিনি এতক্ষন ছিলেন। একটুও দ্বিধা না করে তিনি বলেন, "রমেনের বাড়ি আজ দুপুরের খাওয়া হল"। রমেনবাবু বিপত্নীক মানুষ, তাই দুই বন্ধুর দুপুরের খাওয়া সেরে আসাটাকে সত্যবাবুর স্ত্রী সরল মনেই বিশ্বাস করে নেন। আগেও বেশ কয়েকবার সত্যবাবু এরকম ভাবেই বাড়িতে না বলে রমেনবাবুর বাড়ি দুপুরের খাওয়া খেয়ে এসেছেন।

বাড়ি ফিরে চেয়ার এ বসে সত্যবাবু ঢকঢক করে এক বোতল জল খান। যা গেলো আজ ! বাবারে ! ছেলে ভালো আর কপাল ভালো, তাঁকে মেরে ফেলেনি ছোকরাগুলো। স্ত্রীকে একবার ডেকে তাঁর হাত ধরে বলেন, "বাসি লুচিগুলো কাল সকালে দিও", আর সাথে এও বলেন, "সত্যি বলছি বিভু, তোমার হাতের তৈরী লুচি-বেগুনভাজা সবচেয়ে সুস্বাদু।" গিন্নি হেসে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ান। "ওহ্ আর একটা কাজ আছে", মনে মনে ভাবেন সত্যবাবু তারপর বাড়ির ল্যান্ডলাইন থেকে ফোন করেন বিকাশকে। বিকাশ তাঁর পুরোনো অফিসের বড়কর্তার ছেলে, সত্যবাবুকে সে এখনও খুব সম্মান করে। "দেখো তো ভায়া দুটো ছেলের চাকরি  দেওয়া যায় কি না আপিসে ? ১২ পাস, খুব ভালো, ভরসাযোগ্য। ছোটোখাটো কাজ হলেও চলবে...", সত্যবাবু ফোনে কথা বলতে থাকেন..........।

                                                    ........সমাপ্ত

"লুচি" গল্পটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা কিন্তু আমাকে জানাতে ভুলবেন না। আপনি আরো গল্প পড়তে আমাকে অনুসরণ করতে পারেন। গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।


মেহেদী হাসান পিয়াস


No comments

Powered by Blogger.