বাস্তবতা
![]() |
বাস্তবতা - Green Vivacity |
আজকাল ছেলে মেয়েরা একটু বেশি সেনসিটিভ হয়ে গেছে। কিছু তে দুঃখ পেলে, বাবা-মা কিছু বাজে কথা বললেই, প্রেমে ধোকা খেলেই "সুইসাইড"। এরা সুইসাইড করতে একটু দ্বিধা বোধ করে না, বাবা-মা র কথা মনে করে না। এই সব আলোচনা করতে করতে আমি আর সুভাষ বাবু কখন যে মুখার্জী লেনে পৌঁছে গেছি সেটা বুঝতে ই পারি নি।
আমার নাম সায়ন রায় সাব ইন্সপেক্টর কোন্নগর থানা, সুভাষ বাবু হলেন একজন হাবিলদার, আমার থেকে বয়সে বড়ো বলে ওনা কে আমি সুভাষ বাবু বলি।মুখার্জী লেন-এ পৌঁছে আমরা লাল গেট ওয়ালা একটা দুইতোলা বাড়ি তে গেলাম। সোজা বাড়ি তে ঢুকেই বা দিকের ঘর টা তে যেতেই বুঝতে পারলাম মৃতদেহ টা এখনো ঘর থেকে বার করা হয়ে নি। ছেলেটির গায়ে ও গলায় নীল দাগ দেখা যাচ্ছে, প্রায় রাত দুটো-তিন টে নাগাদ ছেলেটি গলায় দড়ি দিয়েছিলো। ছেলের মা পুরো পাথর হয়ে গেছে বাবা দেয়ালে মাথা ঠুকছে, আমি বললাম "বডি টি এবার নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করতে হবে"।
সবার থেকে খবর নিয়ে যা জানলাম "সকাল নয়টার সময়ে মা প্রথম টের পান, দরজা খুলছে না দেখে তারা দরজা ভাঙেন এবং দেখেন ছেলের মৃতদেহ সিলিং পাখার সাথে ঝুলছে। যে ছেলে সকাল সাতটায় উঠে যায় সে সকাল নয়টার পর না ওঠাতে মা র প্রথম সন্দেহ হয়ে। আমি সারা ঘরটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম, দেখতে দেখতে হঠাৎ টেবিলের উপর একটা কালো রঙের ডাইরি চোখে পড়লো, ডাইরি টা কারোর অজান্তেই হাতে তুলে নিলাম, ডাইরি টা উল্টে পাল্টে দেখলাম, ডাইরি তে ডেট দিয়ে দিয়ে অনেক কিছু লেখা আছে, ডাইরি টা দেখে বুঝলাম এটা থেকে সুইসাইড এর কারণ জানা গেলো ও যেতে পারে, তাই কাউকে না বলেই ডাইরি টা নিয়ে নিলাম।
ছেলে টির ডেডবডি টি নিয়ে যাওয়ার সময় মা র কান্না দেখে খুব কষ্ট হলো, বাড়ি ফিরলাম রাত নয়টা বাজে তখন, হাত মুখ ধুয়ে ঘরে গেলাম আর রিমা কে বলে দিলাম বাইরে থেকে খেয়ে এসছি আর কিছু খাবো না। ডাইরি টা টেবিলে রাখলাম, রিমা ঘরে এলো, ওর সাথে একটু গল্প করলাম, কিছুক্ষণ পর যখন ও শুয়ে পড়লো, আমি টেবিল লাম্প টা জ্বালিয়ে ডাইরির পাতা ওল্টাতে লাগলাম।
ডাইরি র ওপরে ছেলে টির নাম বড়ো করে লেখা আছে "টুবান সাহা", লেখা পড়তে পড়তে বুঝলাম ছেলেটির বাবা মা খুব রাগি ছিলেন, বাবা মা দুজনেই চাকরি করতেন কেউ ছেলে টি কে সময়ে দিত না, বাবা তো সারা দিন ছেলেটিকে পড়া সোনার জন্য বকাবকি করতেন, ছেলে টিও পড়াশুনা তেও খুব ভালো ছিলো, মাধ্যমিক এ ৫৯০ পেয়ে ছিলো, একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে ভর্তি হয়ে ছিলো, একাদশ শ্রেণিতে ও খুব ভালো ফলাফল করে ছিলো, এই সব পড়তে পড়তেই একটা লেখা চোখে পড়লো।
ছেলে টির কথায় বললাম --------
*১৮জুন,২০১৬* - আজ প্রথম শ্রেয়ার সাথে গুল্প করতে করতে বাড়ি ফিরলাম, মেয়েটি বেশ ভালো, পড়াশুনা তেও খুব ভালো, শ্রেয়া বাণিজ্য বিভাগ নিয়ে পড়তো, মেয়েটি কে আমার বেশ ভালো লাগে।
*২০জুলাই,২০১৬* - শ্রেয়া কে আজ প্রপোস করলাম, একটা লাল গোলাপ দিয়ে, কিছুটা পুরোনো স্টাইলে, শ্রেয়া গোলাপ টা নিলেও সেদিন কোনো উত্তর দিলো না আমার প্রপোজালের ।
*২৪জুলাই,২০১৬* - শ্রেয়া আজ আমার প্রপোজাল একসেপ্ট করলো, আজকের দিনটা আমার সব থেকে সুখের দিন, এটা কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না।
"এর পরের লেখা গুলো সব দুজনের প্রেম নিয়ে, পড়তে পড়তে একটা লেখা আবার চোখে পড়লো তারিখ টা ছিলো -------------"
*৩০সেপ্টেম্বর,২০১৬* - আজ রাহুল, রাতুল, তন্ময় জোর করে আমাকে সিগারেট খাওয়ালো, প্রথমে ভালো না লাগলে ও তারপর বেশ ভালো লাগছিলো।
*২১অক্টোবর,২০১৬* - আজ রাস্তাতে একটা ছেলে কে দেখছিলাম মাঝে মাঝে কিছু লোক কে পকেট থেকে বার করে কি দিচ্ছে আর তার বদলে টাকা নিচ্ছে, আমি গেলাম ছেলেটিকে টাকা দিলাম ছেলেটি পকেট থেকে বার করে একটা প্যাকেট দিলো, প্যাকেটটা খুলতেই বুঝলাম এটা "গাঁজা"।
*২৮অক্টোবর,২০১৬* - ধীরে ধীরে সব নেশা করা শুরু করলাম, কোনো কিছুই বাদ গেলো না, বাবা মা এখনই অবধি জানতে পারে নি যে আমি এই সব নেশা করি, তার মধ্যে শ্রেয়ার কোনো এক দাদা আমাদের কে একসাথে ঘুরতে দেখে নিয়েছে, সেই কারণে ওকে ওর বাবা মা খুব বকেছে, বকাবকির ফলে শ্রেয়া আমার সাথে ব্রেকআপ করে দিয়েছে।
ধীরে ধীরে পড়াশুনা করা প্রায় বন্ধ করে দিলাম, মাঝে মাঝে নেশা করার টাকা যখন শেষ হয়ে যেত তখন টিচারদের জন্য দেয়া মাইনে গুলো দিয়ে নেশা করতাম, সব জাগায় পড়া ছেড়ে দিলাম, আমার কিছু বন্ধু আমাকে সাহায্যের চেষ্টা করতো, আমি ও বাবা মা কে কিছু বলতে পারতাম না।
*১ফেব্রুয়ারি,২০১৭* - ধীরে ধীরে নেশা জিনিসটার থেকে দূরে যেতে লাগলাম, পড়াশুনার দিকে ঝুঁকলাম, কিন্তু তখন প্রচুর সিলেবাস বাকি, যত টা পারলাম চেষ্টা করলাম।
*২৯মার্চ,২০১৭* - আজ পরীক্ষা শেষ হলো পরীক্ষা যা খারাপ হয়েছে সেটা বলে বোঝানোর নয়, আমি বুঝে গেছিলাম আমি পাস করবো না, বন্ধুদের দেখছিলাম হাসতে হাসতে বেরোচ্ছে তখন নিজের ওপর খুব রাগ হচ্ছিলো।
পরীক্ষার কয়েক দিন পর শুনেছিলাম আমার এক বন্ধুর সাথে শ্রেয়ার রিলেশান হয়েছে, আমি প্রায়ই সব দিক দিয়ে শেষ হয়ে গেছিলাম, তার ওপর বাবা বললো উচ্চমাধ্যমিক এর রেজাল্ট বাজে হলে আমাকে ঘর থেকে বার করে দেবে, লোকজনের কাছে তার নাকি লজ্জাতে নাক কাটা যাবে যদি রেজাল্ট খারাপ করি। ধীরে ধীরে রেজাল্ট এর দিন কাছে আসতে লাগলো।
*২৮মে ২০১৭* - আমি ভেবে ফেলেছিলাম কি করব, রেজাল্ট খারাপ হয়ে আলাদা বেপার, কিন্তু আমি ফেল করবো, আর আমি চাই না আমার জন্য বাবা-মার লজ্জা হোক, তাই আজ নিজেকে শেষ করে ফেলবো.......!
"পুরো ডাইরিটা পড়ে যখন রাখলাম তখন ঘড়ি তে ৩:৩০ বাজে, হঠাৎ মনে পড়লো আজ তো ৩০মে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে ।"
"এরকম কত টুবান একটা রেজাল্ট এর জন্য নিজের লাইফটা কে শেষ করে দিচ্ছে, কত ছেলে এরকম করে সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, তাই বাড়ির মা-বাবা দের কে বলছি এদেরকে হারিয়ে যেতে দেবেন না"।
........সমাপ্ত
"বাস্তবতা" গল্পটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা কিন্তু আমাকে জানাতে ভুলবেন না। আপনি আরো গল্প পড়তে আমাকে অনুসরণ করতে পারেন। গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মেহেদী হাসান পিয়াস
No comments