প্রথম দেখা

প্রথম দেখা - Green Vivacity


                     ঘড়িতে সময় ঠিক ৫টা বেজে ২০ মিনিট। নদীর ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা একলা মেয়েটা একটু আনমনা। অনেক মানুষের ভিড়ে একটু কোনের দিক বেছে নিয়ে দাঁড়িয়ে। পিয়াস তাকে ঠিক সাড়ে ৫ টার সময় আসতে বলেছিল। কিন্তু অত্যন্ত উত্তেজনার বশে আগেই পৌঁছে গেছে পিউ। এই দিন টার জন্যেই না কতদিন ধরে অপেক্ষা করেছে সে ! দিন গুনেছে একটু একটু করে। ভেবেছে কবে পিয়াস এর সাথে তার সরাসরি দেখা হবে।

গত বছর ফেব্রুয়ারী মাসে সোসাল সাইটের মাধ্যমে পিয়াস এর সাথে তার আলাপ। নাহ ! ঠিক অপরিচিত ছিল না পিয়াস, তবে পরিচিত ও ছিল না। কমন ফ্রেন্ড এর মাধ্যমে চিনতো ওকে এবং সেই সূত্রে আলাপ বলা যায়। পিয়াস সাউথ কলকাতার ছেলে হলেও কর্মসূত্রে ঘাঁটি গেড়েছে ব্যাঙ্গালোরে। আর পিউ কলকাতার একটা প্রাইভেট কলেজের পার্ট টাইম লেকচারার। দুজনের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব অনেক হলেও বন্ধু হতে ওদের বেশি সময় লাগেনি। শান্ত শিষ্ট পিউ আর হাসি খুশি মিশুকে পিয়াস খুব তাড়াতাড়ি কাছের বন্ধু হয়ে ওঠে। গত বছর পুজোয় আসতে পারেনি কাজের চাপে। তাই এইবার কথা দিয়েছিলো পিউকে যে, খুব তাড়াতাড়ি এসে ওর সাথে দেখা করবে পিয়াস।

এই কটা দিন যে পিউ কী করে কাটিয়েছে তা পিউ ছাড়া কেউ জানে না। কবে কখন যে কীভাবে পিউ পিয়াস কে এতো কাছের করে ভেবে নিয়েছে তা পিয়াস ও বোধহয় জানে না। ভালো করে বললে পিউ জানতে দিতে চায়নি পিয়াসকে ! যতবার পিয়াস এর ছবি গুলো দেখে ততোবার ওর মনে হয়, এই মানুষটা কে বারবার দেখলেও কেন যেন আরও দেখতে ইচ্ছে হয় !

পিয়াস এতকিছু জানে না। টের ও পায়না সে খুব হাসি খুশি হুল্লোড়ে বন্ধু বান্ধব আড্ডা কাজ এই নিয়ে দিব্বি কেটে যায় তার। সে যে পিউ এর সম্পর্কে কি ভাবে এটা বুঝেই পায়না পিউ ! কখনো খুব কথা হয় ওদের চ্যাট এ। কখনো বা আবার কাজের চাপে পিয়াস কথা বলতেও ভুলে যায়, ৩দিন ৪ দিন কোনো কথা ছাড়া ই কেটে যায় ওদের। পিউ ভেবে পায়না কীভাবে পিয়াস ওর সাথে কথা না বলে থাকতে পারে। যেখানে পিউ এর একেক টা সময় কত দীর্ঘ লাগে পিয়াস কে ছাড়া, পিউ জানেনা ! যখন ই ভাবে আর কথা বলবে না পিয়াস এর সাথে অমনি টুং টাং ফোন বেজে ওঠে, আর এক মুহূর্তের মধ্যে সব অভিমান মুছে যায় পিউ এর।

তবে পিউ ঠিক করেছে তার মনের কথা সে জানতেও দেবেনা পিয়াস কে। কি দরকার যদি এসব শুনে পিয়াস আর বন্ধুত্ব না রাখে ! নাহ্, এটাই তার চেয়ে ভালো। ধুর কী যে সব এলোমেলো ভাবতে বসলো ও !

ঘড়িতে ঠিক ৫টা বেজে ৫০ মিনিট ! এতো দেরি হয়ে গেলো পিয়াস এখনো তো এলোনা, তবে কি আর আসবেনা ও ? ফোনটা বের করে ফোন করলো বার তিনেক। নাহ ধরছেও না ! তবে কি পিয়াস ভুলে গেলো ? কিন্তু ও নিজ থেকে সময় দিয়েছিলো যে তবে কি পিয়াস ইচ্ছে করেই !

ভাবতে ভাবতে চোখে জল এসে গেলো পিউ এর। টানা একটা বছর অপেক্ষা করার এই ফল পেলো সে। এমন করতে পারলো পিয়াস ওর সাথে ? অন্তত আস্তে না পারলে ফোন করতে পারতো ! সকালেও বললো আসবে, এখন ফোন টাও ধরলোনা। আর এক মুহূর্ত ও পিউ আর দাঁড়াবেনা এখানে।

হঠাৎ, এগোতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে একটা পরিচিত গলা পেলো সে।

"আমার পাগলীটা কী আমার সাথে দেখা না করেই চলে যাবে ?"

পিউ পেছনে ফিরেই দেখে সেই একজোড়া চশমা আর দাড়ির আড়ালে একমুখ মিষ্টি হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে তার অতি কাঙ্খিত মানুষটি।

পিয়াস বলে ওঠে, "অনেকক্ষন আগেই এসেছি তোকে দেখছিলাম দূর থেকে। একমনে দাড়িয়ে নখ খাচ্ছিলি। আর টেনশন মুখে কিসব ভাবছিলি ! ফোন বের করে ফোন ও করলি। ওমা তারপর গঙ্গা যমুনা বইতে শুরু করতেই আমি আর থাকতে পারলাম না।ভাবলাম যাকে মনের কথা বলতে এতো দূর ছুটে আসা তাকেই কাঁদিয়ে দিলাম ! শোন পাগলী বাকি কান্না আমার সাথে বিয়ের দিন কাঁদবি ? কিরে রাজি বল জলদি ?"

কি বলবে পিউ ? কিছু বলতে পারছে না সে এখন আর, শুধু এক রাশ ভালোলাগার কান্না কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরে পিয়াসকে। সন্ধ্যা নামা বিকেলে গঙ্গা তার সাক্ষী হয়ে থাকে !

                                                           ........সমাপ্ত

"প্রথম দেখা" গল্পটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা কিন্তু আমাকে জানাতে ভুলবেন না। আপনি আরো গল্প পড়তে আমাকে অনুসরণ করতে পারেন। গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।


মেহেদী হাসান পিয়াস

                                                                             ©

1 comment:

Powered by Blogger.